‘সন্তুর আমার কাছে উপাসনার মতো। এই বাদ্যযন্ত্রটি যখন আমার হাতে থাকে, তখন কি আমি পৃথিবীতে থাকি? কে যেন মরমী কণ্ঠে ডেকে যান আমাকে। সন্তুরের মাধ্যমে আমি তার সন্ধান করি। এই যন্ত্রে একটি নতুন সুর যখন সৃষ্টি হয়, আমি তাকে দেখতে পাই যেন!’
এক সাক্ষাৎকারে সন্তুরের প্রতি পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার দরদী আবেগটা ধরা পড়ে এভাবেই।
যে যন্ত্রের বাজনা শুনলেই মনে হয় যেন একটা পাহাড়ি নদীর স্রোত বয়ে চলেছে, সেই সন্তুর আর শিব কুমার শর্মা ছিলেন অবিচ্ছেদ্য। কাশ্মীরের লোকজ বাদ্যযন্ত্র সন্তুরকে শিবকুমার শর্মাই শাস্ত্রীয় বাদ্যযন্ত্রে উন্নীত করেন।
কাশ্মীরের পাহাড়ের উপত্যকায় সুফিগানের সঙ্গে বাজত শততন্ত্রী বীণা। একে মার্গীয় যন্ত্রে রূপান্তরের স্বপ্ন দেখেছিলেন পণ্ডিত উমাদত্ত শর্মা। ছেলে শিবকুমারের হাতে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটি বাজাও। এই যন্ত্রের বদৌলতে একদিন তোমার নাম-খ্যাতি হবে।’
সংশয়ে যন্ত্রটি হাতে নিয়েছিলেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। পরে তাঁর স্পর্শে শততন্ত্রী বীণা হয়ে যায় ‘সন্তুর’। ভবিষ্যদ্রষ্টা উমাদত্তের কথাই সত্য হলো। শিবকুমারের খ্যাতি জগৎজোড়া।
কাশ্মীরি এই বাদ্যযন্ত্রটি তিনি শিখতে শুরু করেন ১৩ বছর বয়সে। সেই সময়ে তাঁর বাবা উমাদত্ত শর্মা সন্তুর নিয়ে গবেষণা করছিলেন আর ওই লোকজ যন্ত্রটিকে কীভাবে শাস্ত্রীয় বাদ্যযন্ত্রে রূপান্তরিত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলেন। তা থেকেই নিজের ছেলেকে তিনি সন্তুরের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।
শিব কুমার শর্মা সঙ্গীত পরিচালনা করেন বেশ কিছু সিনেমাতেও- তার সঙ্গী ছিলেন প্রখ্যাত বাঁশি শিল্পী হরি প্রসাদ চৌরাসিয়া।
আবার দিকপাল তবলা বাদক জাকির হোসেনের সঙ্গেও শিব কুমার শর্মার যুগলবন্দী সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে ছিল খুবই লোভনীয় উপস্থাপনা।
সংগীত নাটক একাডেমিসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কার পেয়েছেন শিবকুমার। ২০০১ সালে পান পদ্মবিভূষণ। এ ছাড়া আমেরিকার সম্মাননীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় তাঁকে।
২০২২ সালের ১০ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। আজ তাঁর জন্মদিন। জন্মদিনে এই শিল্পীর প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।