জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৫:৫৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
এবার ধর্মের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর নাম জড়িয়ে গেল৷ কারণ সুইজারল্যান্ডের লুসার্ন শহরের এক গির্জায় মানুষ এআই যিশুর সঙ্গে কথা বলছে৷ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ তার সঙ্গে কথা বলে সন্তোষ প্রকাশের কথাও জানিয়েছে৷ তবে অনেকে সমালোচনাও করছেন৷ খবর ডিডাব্লিউ বাংলা।
পিটার্স চ্যাপেলে স্বীকারোক্তির সময় একজন যাজকের পরিবর্তে অনুতপ্ত ব্যক্তিদের স্বাগত জানায় তার, কম্পিউটারসহ কিছু প্রযুক্তি, যার মূল্য কয়েক হাজার ইউরো৷ আর অন্য পাশে থাকা স্ক্রিনে যিশুর মতো একজন ভেসে ওঠেন, যিনি সান্ত্বনা, আনন্দ ও বিশ্বাসের কথা বলেন৷
এখন পর্যন্ত যিশু শুধুমাত্র ভক্তিমূলক বস্তু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন: নীরব আর দৃঢ়, যদিও প্রার্থনা ও ধ্যানের জন্য সবসময় তার কাছে যাওয়া যায়৷
তবে পিটার্স চ্যাপেলের এআই যিশু এখন কথা বলছেন৷ তার কাছে মেয়েদের কেন যাজক হতে দেওয়া হয় না প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘‘ধর্মগ্রন্থে বলা আছে, গির্জায় যার যার কাজ নির্দিষ্ট করা আছে৷ ঈশ্বরের পরিকল্পনায় প্রতিটি দায়িত্ব ও কাজের গুরুত্ব আছে৷ আপনি কীভাবে আপনার জীবনে শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখেন?”
উত্তরের মধ্যে অনেক প্রশ্ন থাকে, তারপরও অনুপ্রেরণামূলক৷
একজন ধর্মপ্রাণ নারী এআই যিশুর সঙ্গে কথা বলার পর জানান, ‘‘আমি যেভাবে চলছি সেটা ঠিক আছে বলে তিনি আমাকে নিশ্চিত করেছেন৷ আমার মনে যে প্রশ্ন ছিল তার উত্তর দিয়েও সহায়তা করেছেন৷ যেমন আমি জানতে চেয়েছিলাম, আমি কীভাবে অন্য মানুষকে তার কাছাকাছি আসতে উৎসাহিত করতে পারি।”
আরেকজন বলেন, ‘‘আমি অবাক হয়েছি৷ ব্যাপারটা অনেক সহজ ছিল৷ যদিও এটা একটা যন্ত্র ছিল, তারপরও এটা আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছে- খ্রিস্টান ধর্মের মতাদর্শের ভিত্তিতেও৷ আমার মনে হয়েছে তিনি আমার সমস্যা বোঝার চেষ্টা করেছেন।”
ধর্মেও ডিজিটাল বিপ্লবের ছোঁয়া লেগেছে৷ কিন্তু লুসার্ন কেন? কারণ, এই শহরের নাম শুনলে মানুষের সাধারণত প্রথমে লেক ও পাহাড় ঘেরা একটি সুন্দর এলাকার কথা মনে পড়ে৷
ঐতিহাসিক বিভিন্ন ভবন দেখতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ঐ শহরে যান৷
কিন্তু লুসার্ন ভবিষ্যতের দিকেও তাকায়- সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ বেশ সমৃদ্ধ৷ সেখানেই এআই যিশুর জন্ম হয়েছে৷ মার্কো শ্মিড সেটি তৈরি করেছেন৷ প্রযুক্তিপ্রেমী এই মানুষটি পিটার্স চ্যাপেলের একজন ধর্মতত্ত্ববিদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখানে একটা পরীক্ষা করছি৷ এআই এর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দেওয়ার মাধ্যমে আমরা মানুষের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে চেয়েছি৷ এভাবে আমরা একে অপরের সঙ্গে এআই নিয়ে কথা বলার ভিত্তিটা গড়ে দিতে চেয়েছি।”
এআই যিশুর সঙ্গে কথা বলার পর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা নিয়ে বের হয়েছেন৷
লুসার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতিশাস্ত্রের অধ্যাপক পেটার কির্শশ্ল্যাগার প্রকল্পটি নিয়ে খুশি না হলেও মনে করছেন, এটি চিন্তার খোরাক জোগাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘যখন বিশ্বাস ও যাজকের সেবা পাওয়ার কথা আসবে তখন আমাদের সতর্ক হতে হবে৷ ধর্মের অর্থ খোঁজার সময়ও৷ এই বিষয়টায় যন্ত্রের চেয়ে আমরা মানুষেরা অনেক বেশি দক্ষ৷ ফলে এসব বিষয় আমাদেরই করা উচিত।”
পোপ ফ্রান্সিসও এখনও এই বিষয়ে কথা বলেননি৷ তবে চ্যাপেলের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক সমালোচনাও হচ্ছে৷ যেমন এই লেখা বলছে: পরিণতি ভোগ করতে হবে৷