ছবি: সংগৃহীত
সরকারের নতুন নিয়ম হলো, জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০টি নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করা যাবে। যাদের কাছে ১০টির বেশি নিবন্ধিত সিম আছে, তাদের অতিরিক্ত সিম ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তবে তার আগে নিজের অপ্রয়োজনীয় সিমের নিবন্ধন বাতিল করার সুযোগ পাবেন ব্যবহারকারীরা। পুরো প্রক্রিয়া আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গত মে মাসে একজন ব্যবহারকারীর সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। জাতীয় নিরাপত্তা, অপারেটরদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক অনুশীলন চর্চা বিবেচনায় নিয়ে একজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সিমের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০টি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে। বিটিআরসির ২৯৬তম কমিশন সভায় সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়। সংস্থাটি বলছে, সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিবন্ধনের সুযোগ বেঁধে দিলে ২৬ লাখ ব্যবহারকারীর ৬৭ লাখ সিম বন্ধ হয়ে যাবে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত প্রকৃত সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৫। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ ব্যবহারকারীর নামে ৫টি বা তার কম সিম রয়েছে। ৬ থেকে ১০টি সিম রয়েছে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যবহারকারীর কাছে। ১১ থেকে ১৫টি সিম ব্যবহারকারী মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
বিটিআরসি শুরুতে জানিয়েছিল, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে এই সময়সীমা পিছিয়েছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এমদাদ উল বারী বলেন, মানুষের ভোগান্তি যেন না হয়, তাই সময় নিয়ে কাজটি করতে হবে। আগামী ১ আগস্ট থেকে গ্রাহকদের ৩ মাসের জন্য সময় দেওয়া হবে নিজ উদ্যোগে ১০টির বেশি সিম থাকলে তা বাতিল করার জন্য। এরপর বিটিআরসি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি সিমগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে ৫ থেকে ৬ মাস সময় লাগবে। খবর প্রথম আলো।
যেসব ব্যবহারকারীর নামে ১০টির বেশি সিম রয়েছে, শুরুতে তাদের নামের তালিকা করা হবে। এ কাজ করবে বিটিআরসির নিয়োগ করা সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্মের ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান। পরে এসব ব্যবহারকারীর নিবন্ধিত সিমের নম্বরগুলো নিজ নিজ অপারেটরকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
অপারেটররা এ তালিকা অনুযায়ী গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তার নামে নিবন্ধিত সিম ১০টিতে নামিয়ে আনার বিষয়ে অনুরোধ জানাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীকে অপারেটররা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি করে এসএমএস দিয়ে সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়ে অনুরোধ জানাবে।
পাশাপাশি অপারেটররা তাদের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার করবে। এ ছাড়া বিটিআরসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক বা অনলাইন সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে গ্রাহকদের অবহিত করা হবে।
১০টির বেশি নিবন্ধিত সিম থাকা ব্যবহারকারীদের তালিকা অপারেটররা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে।
ব্যবহারকারীরা *১৬০০১# নম্বরে ডায়াল করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে কতটি সিম নিবন্ধিত আছে, সেটার সংখ্যা ও নম্বর জানতে পারবেন। অতিরিক্ত সিম থাকলে তা ‘ট্রান্সফার অব ওনারশিপ’ করতে পারবেন।
এ ধাপের কার্যক্রম ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা শুরুতে জানানো হয়েছিল। অবশ্য বিটিআরসির সূত্র জানায়, এ সময়সীমা ৩০ অক্টোবর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ সময়ের পরও যেসব ব্যবহারকারীর নামে ১০টির বেশি সিম থাকবে, ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের তালিকা করে অপারেটরদের জানিয়ে দেওয়া হবে। অপারেটররা সেই তালিকার ভিত্তিতে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য পৃথক তালিকা প্রস্তুত করবে।
সে ক্ষেত্রে সিমগুলো থেকে রাজস্ব আহরণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। সর্বশেষ ছয় মাসে সর্বোচ্চ রাজস্বের সিমটি শুরুতে থাকবে এবং কম রাজস্বের সিমটি শেষে থাকবে। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর যে সিম নিয়মিত সচল থাকে এবং বেশি ব্যবহৃত হয়, সেটাকে প্রথমে রাখা হবে। পাশাপাশি এমএফএসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকলে সেসব সিমের কথা তালিকায় উল্লেখ করতে হবে।
অপারটেরদের কাছ থেকে পাওয়া এই তালিকার ভিত্তিতে বিটিআরসির ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীর জন্য ১০টি সিম নির্ধারণ করবে। ব্যবহারকারীর যতগুলো অপারেটরের সিম রয়েছে, তাদের সবার যেন অন্তত একটি সিম থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হবে। নিজ নিজ অপারেটরের জন্য ব্যবহারকারীর সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণের সিম হতে হবে। প্রয়োজনে অপারেটরদের বিশেষ পছন্দের দুটি সিম প্রাধান্য পেতে পারে।
ব্যবহারকারীদের ১০টি সিমের তালিকা তৈরি হয়ে গেলে বাকি সিমগুলোর নিবন্ধন বাতিলের জন্য অপারেটরদের পাঠানো হবে। এ প্রক্রিয়া আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, ১০টির বেশি সিম বন্ধের এ প্রক্রিয়ায় কোনো গ্রাহকের প্রয়োজনীয় সিম যদি বাতিল হয়ে যায়, তবে অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুনরায় তা নিবন্ধন করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।