কিছু গান মনে এতোটাই দাগ কেটে যায় যে, চেষ্টা করেও ভুলে যাওয়া যায় না। গানের কথা মনে না পড়লেও সুর মনের ভেতর গুণগুণ করতেই থাকে। তেমনই একটা গান "হাওয়া মে উদতা জায়ে... মেরা লাল দোপাট্টা মালমাল কা জি.... হো জি।"
তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ.... কে শোনেনি এই গান? বিশ্বব্যাপী সঙ্গীত শ্রোতারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে শুনেছেন গানটি। গানটি শোনা মাত্রই বাংলাদেশের শ্রোতাদের প্রথমেই যার কথা মনে পড়ে তিনি হলেন বাকের ভাই।
১৯৯২-৯৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়া ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের মূল চরিত্র বাকের ভাই। ৩০ পর্বের এই ধারাবাহিক নাটকে ‘বাকের ভাই’ এর সবচেয়ে পছন্দের গান ছিলো এটি। এ চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর।
নাটকটিতে এতোবার এতোভাবে গানটি ব্যবহার করা হয়েছিল যে যারা মূল গানটি কখনোই শোনেননি, তাদের মনেও জায়গা করে নিয়েছিল গানটি। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও বরকত উল্লাহ নির্দেশিত এই নাটকটিকে এদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় নাটক হিসাবে ধরা হয়।
নাটকটিতে এই গানটির ব্যবহার মূল গানটি মানুষের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তোলে। কিন্তু এই গানের ভক্তদের মধ্যে ক'জনই বা বলতে পারবেন- কোন জনপ্রিয় সিনেমার গান এটি? এই গানের সুরকার বা গীতিকার কে? গানটি কত সালে রিলিজ হয়েছিলো? চলুন জেনে নেই সেসব খবর....
১৯৪৯ সালের রাজ কপূর প্রযোজিত এবং পরিচালিত বলিউডের ব্লাক এন্ড হোয়াইট সিনেমা বারসাতের গান এটি। গল্প, সংলাপ এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন -রামানন্দ সাগর। ছবিতে রাজ কাপুর, নার্গিস, প্রেম নাথ, নিম্মি, কে এন সিং, কোকিল এবং আরো অনেক বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী অভিনয় করেছেন।
এই চলচ্চিত্রের "হাওয়া মেইন উদতা জায়ে" গানটি ১৯৪৯ সালের ২১ এপ্রিল তারিখে ০২ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রকাশিত হয়। গানটির কথা লিখেছেন- রমেশ শাস্ত্রী। এবং গানটি গেয়েছেন- বিখ্যাত গায়িকা লতা মঙ্গেশকর। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শঙ্কর সিংহ রঘুবংশী এবং জয়কিশান দয়াভাই পাঁচাল।
এই সিনেমার সমস্ত সঙ্গীত রচনা করেছেন শঙ্কর এবং জয়কিশান। কিন্তু ভিন্নতা ঘটেছে দুটি গানে। বারসাত তৈরি করার সময় অভিনেতা-চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজ কাপুর প্রতিভা আকর্ষণের একটি অভিনব উপায় বেছে নিয়েছিলেন। তিনি সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন যে তিনি তার প্রকল্পের জন্য গান খুঁজছেন।
বোম্বাইয়ের গ্লিটজ এবং গ্ল্যামার থেকে অনেক দূরে, বেনারসের সংস্কৃতের একজন তরুণ পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী বিজ্ঞাপনটি পড়েছিলেন এবং কয়েকটি গান পাঠিয়েছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল অমর সংখ্যা 'হাওয়া মে উদতা জায়ে'। গানটি নির্বাচিত হয়েছিল এবং লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া সর্বকালের অন্যতম স্মরণীয় গানে পরিণত হয়েছিল। এই সিনেমার গান এবং কাহিনীর কারণে ১৯৪৯ সালে বারসাত ভারতীয় সিনেমায় সর্বোচ্চ উপার্জনকারী সিনেমা হয়ে ওঠে।
গানটি বিশ্বজুড়ে এতোটাই জনপ্রিয় ছিলো যে ২০০২ সালে বোম্বে ভাইকিংস নামে একটি পপ গ্রুপ "হাওয়া মে উদতি যায়" নামে একটি অ্যালবাম এবং গানটির একটি রিমিক্স ভার্সন বের করে। পুরানো এবং নতুন, ভারতীয় এবং পশ্চিমা, ফিল্ম এবং ইন্ডির সঠিক সংমিশ্রণ ঘটেছে এই গানটিতে।
বোম্বে ভাইকিংস গ্রুপটি ভারতীয় পপ এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে একত্রিত করে ১৯৯৪ সালে সুইডেনের স্টকহোমে গঠিত হয়েছিল। হিন্দি এবং ইংরেজির মিশ্রণে নিরাজ শ্রীধরের গাওয়া পুরাতন গানের শ্রুতি মধুর রিমিক্স ভার্সনটি আধুনিক ভাবে আবার মানুষের মনে জায়গা করে নেয়।
গানটির বয়স আজ ৭২ বছর। এতো পুরাতন হওয়ার পরও এই গানটি হয়তো আজও আপনার পছন্দের গানের প্লে লিস্টে আছে। কিছু গান এমনই হয়, যুগের হিসাব রাখতে দেয়না, বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না মনে, মোহিত করে রাখে শ্রোতাদের। নতুন গানের জোয়ার তার রূপ, সুর, সৌন্দর্য মলিন করতে পারে না, সে গান শ্রোতাদের কাছে হয়ে রয় চিরযৌবনা, চিররঙিন।