মার্চ ৪, ২০২৩, ০৯:০২ পিএম
একসময় বাংলাদেশে হাজারেরও বেশি সিনেমা হল। এখন নেমে ৪০-৫০টিতে দাঁড়িয়েছে। সিনেমা না থাকায় সিনেমা হলও কমে এসে এই শিল্প প্রায় ধ্বংসের মুখে। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হিন্দি চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নিয়েও চলছে অনেক হিসাবনিকাশ।
এ নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেছেন, ‘এমতাবস্থায় সিনেমা হল চালু রাখার আর কোনো বাস্তব যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না বিধায় বন্ধ করে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করি।’
শনিবার (৪ মার্চ) ইস্কাটনে ‘সিনেমা হল বাঁচলে, চলচ্চিত্র বাঁচবে’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে হল বন্ধের ঘোষণাস্বরূপ হুমকি দেয়া হয়।
সম্প্রতি ভারতসহ গোটা বিশ্বে মুক্তি পাওয়া শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ মুক্তির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশেও। ফেব্রুয়ারিজুড়ে এমন আভাসে রোজার আগেই হল মালিকদের মধ্যে ঈদ উৎসবের আমেজ দেখা গিয়েছিল! কারণ মন্ত্রণালয় থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছিলেন তারা। ২৪ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মার্চ দুই দফায় মুক্তির কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত অনুমতি পায়নি ‘পাঠান’। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ‘পাঠান’ মুক্তির সম্ভাবনা ফের ঝুলে আছে কাঁটাতারের বেড়ার মতোই।
অবশেষে এবার নিজেদের শেষ সম্বল নিয়েই মাঠে নামল চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। বুকে চেপে যক্ষের ধনের মতো টিকিয়ে রাখা চলমান হলগুলো বন্ধের হুমকি দিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা। তাদের দাবি, বিদেশি তথা হিন্দি সিনেমা আমদানি করতে হবে। নতুবা অচিরেই তারা হল বন্ধ করে দেবেন। কারণ দেশের ছবি চালিয়ে লোকসানের চোরাবালি থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছেন না তারা।
এর আগে ‘পাঠান’ মুক্তি দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন নির্মাতা-প্রযোজক-পরিবেশক অনন্য মামুন। বিষয়টি নিয়ে সিনেমাসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর মতামত জানতে চায় মন্ত্রণালয়। সমিতিগুলোও জানায় সবুজ সংকেত। কিন্তু এর পরও মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের কোনো খবর আসছে না। এই নীরবতাকে ‘না’ সূচক সিদ্ধান্ত মনে করছেন প্রদর্শক সমিতির নেতারা। সে জন্যই তারা সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন।
সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, “তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আমাদের প্রতিনিধিদের সচিবালয়ে ডেকে বলেছিলেন, পরিচালক ও শিল্পী সমিতির অনাপত্তি থাকলে সরকার বছরে অন্তত ১০টি উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দেবে। এরপর চিত্রনায়ক আলমগীরের নেতৃত্বে ‘সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ’-এর ব্যানারে প্রযোজক, পরিচালক এবং শিল্পী সমিতির নেতৃবৃন্দ বছরে ১০টি ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানির ক্ষেত্রে অনাপত্তি জানিয়ে লিখিত প্রস্তাবনা তথ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। সকল বাধা অপসারিত হওয়ার পরও আমদানির অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ‘না’ সূচক মনোভাবের পরিচায়ক।”
সিনেমা হল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, “মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিকভাবে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরও হিন্দি ছবি আনার লিখিত ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ ছাড়া গত বছর সেভাবে তেমন কোনো সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে ব্যবসা করেনি। এভাবে চলতে থাকলে দেখবেন একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে।”
ঠিক কবে নাগাদ হল বন্ধ করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নেতারা জানান, আগামী ঈদের আগেই তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন, সহসাধারণ সম্পাদক মো. খুরশিদ আলম; সংস্কৃতি, সমাজ কল্যাণ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক আর এম ইউনুস রুবেল প্রমুখ। তাদের সম্মিলিত দাবি, বছরে ১০টি ভারতীয় ছবি আমদানির চূড়ান্ত অনুমতি না দিলে হলগুলো একে একে বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ তারা উল্লেখ করেননি।
এদিকে ভারতীয় সিনেমা আমদানির পক্ষে সিংহভাগ মানুষ মত দিলেও অনেকে এর বিরোধিতা করছেন। নির্মাতা-চিত্রনাট্যকার দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, অভিনেতা-প্রযোজক ডিপজল ও খিজির হায়াত খানসহ অনেকেই হিন্দি ছবি মুক্তির বিপক্ষে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর আগে ২০১৫ সালেও হিন্দি সিনেমা আমদানির বিপক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ঢালিউডের তারকারা। সে সময় কাফনের কাপড় পরে রাজপথে নেমে মিছিল পর্যন্ত করেছিলেন শাকিব খান, মিশা সওদাগর, ওমর সানী, পরীমণিসহ প্রথম সারির নির্মাতা-শিল্পীরা। তবে বর্তমানে ‘পাঠান’ মুক্তির আভাসে হল মালিকসহ দেশীয় ভক্তরা নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু সেই আশাতেও গুড়ে বালি এখন! দেশে হিন্দি চলচ্চিত্র মুক্তির পথে বাধা কেন কাটছে না, সে প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে দর্শকদের মনে।