ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে প্রথমবার হারাল আফগানিস্তান। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ৬৯ রানে তারা আজ দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে হারিয়েছে।
টসে জিতে ফিল্ডিং নেয় ইংল্যান্ড। আফগানিস্তান ২৮৪ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ইংল্যান্ড ২১৫ রানে গুটিয়ে যায়।
২০১৫ সাল থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চে টানা ১৪ ম্যাচ হারের পর অবশেষে জয়ের স্বাদ পেলো আফগানিস্তান। এছাড়া বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের দ্বিতীয় জয় পেয়েছে আফগানিস্তান। এর আগে ২০১৫ সালে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে স্কটল্যান্ডকে ১ উইকেটে হারিয়ে জয়ের সূচনা করেছিলো আফগানরা।
রহমানউল্লাহ গুরবাজ-ইকরাম আলিখিলের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে প্রথমে ব্যাট করে ৪৯ দশমিক ৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রান করে আফগানিস্তান। গুরবাজ ৮০ ও আলিখিল ৫৮ রান করেন। জবাবে আফগানিস্তানের স্পিন বিষে ৫৭ বল বাকী থাকতে ২১৫ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। আফগানদের তিন স্পিনার মুজিব উর রহমান-রশিদ খান ৩টি করে এবং মোহাম্মদ নবি ২টি উইকেট নেন। বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে হারের পর এবারের আসরে প্রথম জয় পেল আফগানিস্তান। নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর বাংলাদেশকে উড়িয়ে প্রথম জয় পেয়েছিলো ইংল্যান্ড। এতে ৩ ম্যাচ শেষে সমান ২ পয়েন্ট করে আছে ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তানের।
২৮৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে হোচট খায় ইংল্যান্ড। জনি বেয়ারস্টোকে ২ রানে লেগ বিফোর আউট করেন পেসার ফজলহক ফারুকি। শুরুতেই বেয়ারস্টোকে হারানোর ধাক্কা সামলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ডেভিড মালান ও রুট। ধীরে ধীরে বড় হতে যাওয়া জুটিতে ভাঙ্গন ধরান স্পিনার মুজিব। ১১ রান করা রুটকে বোল্ড করেন মুজিব।
রুট ফিরলেও হ্যারি ব্রুককে নিয়ে রানের চাকা সচল করেন মালান। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা মালানকে ৩২ রানে থামিয়ে আফগানিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন নবি। এমন অবস্থায় ১৩তম ওভারে ৬৮ রানের মধ্যে টপ অর্ডার ব্যাটারদের হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড।
দলীয় রান ১শতে পা দেয়ার আগেই ইংলিশদের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেন পেসার নাভিন উল হক। দারুন ইন সুইংয়ে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জশ বাটলারের উইকেট উপড়ে ফেলেন নাভিন। ১৮ বলে ৯ রান করে প্যাভিলিয়নের ফেরেন বাটলার।
এরপর ১৩৮ রানের মধ্যে ইংল্যান্ডের ষষ্ঠ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের লাগাম নেন রশিদ ও নবি। লিয়াম লিভিংস্টোনকে রশিদ এবং কারানকে শিকার করেন নবি। লিভিংস্টোন ও কারান ১০ রান করে করেন।
সতীর্থদের যাওয়া আসার মাঝে ৪৫ বলে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় অধর্শতক করেন ব্রুক। তার হাফ-সেঞ্চুরির পর মুজিবের বলে ৯ রানে আউট হন ক্রিস ওকস। ১৬০ রানে ইংল্যান্ডের সপ্তম উইকেট পড়লেও, ব্রুককে নিয়ে চিন্তায় ছিলো আফগানিস্তান। অবশেষে ৩৫তম ওভারে ব্রুককে শিকার করেন মুজিব। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৬৬ রানে থামেন ব্রুক। ৬১ বল খেলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন ব্রুক।
১৬৯ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে ব্রুক ফেরার পর ইংল্যান্ডের হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু লোয়ার অর্ডারের শেষ তিন ব্যাটার লড়াই চালিয়ে যান। নবম উইকেটে ২৯ রান তুলে আদিল রশিদ ও উড। দলীয় ১৯৮ রানে ইংল্যান্ডের রশিদকে (২০) শিকার করেন আফগান রশিদ।
শেষ উইকেটে আফগানিস্তানের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন উড ও রিচ টপলি। ১৭ রান যোগ করে দলের রান ২শ পার করেন তারা। ৪১তম ওভারের তৃতীয় বলে উডকে ১৮ রানে বোল্ড করে আফগানিস্তানকে ঐতিহাসিক জয়ের স্বাদ দেন রশিদ। ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন টপলি। আফগানিস্তানের মুজিব ৫১ রানে ও রশিদ ৩৭ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। ২ উইকেট শিকার করেন নবি।
ব্যাট হাতে ১৬ বলে ২৮ রান ও বল হাতে ৫১ রাতে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন আফগানিস্তানের মুজিব।