বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে অজানা কিছু তথ্য

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৮, ২০২২, ০৮:১৪ পিএম

বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে অজানা কিছু তথ্য

১৯৩০ সালে ‘জুলেরিমে ট্রফি’ নামে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর শুরু হয়েছিল। সে সময়কার ফিফা প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সের জুলেরিমের নামেই বিশ্বকাপের নামকরণ করা হয়েছিল। কারণ তার হাত দিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল ফুটবলের এ বিশ্ব আসরের।

যদিও জুলেরিমেই বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রবক্তা বা প্রস্তাবক ছিলেন না। ১৯০৪ সালে ২১ মে প্যারিসে ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা) নামে যে বিশ্ব সংস্থাটি গঠিত হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন সে সময়কার ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মি. ডেলেউনি। তার নেতৃত্বেই ইউরোপের ৭টি দেশ ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, পর্তুগাল ও স্পেনের মতো বাঘা বাঘা ফুটবল কিংবদন্তি ও পৃষ্ঠপোষকরা একত্রিত হয়েছিলেন ফিফা নামের সংস্থা গড়ে তোলার জন্য। তিনিই বিশ্ব ফুটবলামোদীদের এক সুতায় গাঁথার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিশ্বকাপ ফুটবল আসরের ধারণাটি তিনিই প্রথম দিয়েছিলেন বিশ্বকে। ফুটবলের একান্ত সেবক ও পৃষ্ঠপোষক ডেলেউনি ফিফা গঠনে প্রধান ভূমিকা রাখলেও ফিফার প্রথম সভাপতি হয়েছিলেন ফ্রান্সের রবার্ট গুয়েবিন।

ফিফা গঠনের পরই সিদ্ধান্ত হয়েছিল ‘বিশ্বকাপ ফুটবল’ আয়োজনের। গঠনের দুই বছরের মাথায় ১৯০৬ সালে বিশ্বকাপ আসর বসার কথা ছিল। ডেলেউনির প্রাণান্ত চেষ্টা ছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিংশ শতাব্দীর মানুষের মধ্যে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ববোধ, দেশ-জাতি নির্বিশেষে সম্প্রীতি গড়ে তোলার। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের যাত্রা দেখে যেতে পারেননি। বিশ্বব্যাপী নানা সংকট, বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের উত্তর-পূর্ব সময়ের নানা বাস্তবতায় বিশ্বকাপ আয়োজন পেছাতে পেছাতে গিয়ে ঠেকে ১৯৩০ সালে। এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন ডেলেউনি। ডেলেউনির স্বপ্ন সফল করেন মূলত জুলেরিমে। ১৯৩০-এ বিশ্বকাপের প্রথম আসর আয়োজনের সময় তিনি ছিলেন ফিফার সভাপতি। উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সে আসর। যে কারণে জুলেরিমের নামে বিশ্বকাপ ট্রফির নামকরণ হয়েছিল সেটা হলো ডেলেউনির মৃত্যুর পর মূলত তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন জুলেরিমে। ৩০-এর বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনে তিনি ছিলেন প্রাণান্ত ভূমিকাগ্রহণকারী। সে বার পুরো বিশ্বকাপ ট্রফির পুরো ব্যয়ভার গ্রহণ করেছিলেন জুলেরিমেই। তাই বিশ্বকাপের ট্রফির নামকরণ হয় তার নামে। সে সময় এ ট্রফির তৈরি করেছিলেন প্যারিসের বিখ্যাত অলংকার নির্মাতা আবেল লফরিউর। সে ট্রফিটা দেখতে ছিল ‘সোনার পরী’র মতো। উড়ন্ত ডানায় ভর করা গ্রিক পুরাণের সাফল্যের দেবী ‘নাইক’র আকৃতি দেওয়া হয়েছিল সে ট্রফিটিকে।

১৯৩০-এর পর নিয়মিত বিশ্বকাপের আসর চলছে। মাঝখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতিতে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপের আসর আয়োজন করা যায়নি। ১৯৫০ সালে ‘ফুটবলের তীর্থস্থান’ ব্রাজিলে বসেছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের চতুর্থ আসর। তখনো পর্যন্ত বিশ্বকাপ ট্রফি চলছিল জুলেরিমের নামেই। বিশ্বকাপ আয়োজনের শুরু থেকেই ঘোষণা ছিল যে দেশ তিনবার বিশ্বকাপ জিতবে তারাই চিরস্থায়ী মালিক হয়ে যাবে জুলেরিমে ট্রফির। ১৯৫৮, ৬২ ও ৭০ সালে তিনবার বিশ্বকাপ জেতার পর জুলেরিমে ট্রফির চিরকালের মালিক হয়ে যায় ব্রাজিল। এর মধ্যে ১৯৬৬ সালে জুলেরিমে ট্রফি রহস্যজনকভাবে চুরি হয়ে যায়। সে বছর বিশ্বকাপ আসরের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। রোমহর্ষক সে চুরির ঘটনা গোটা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু হারানো ট্রফিটির খোঁজ দিয়েছিল একটি প্রশিক্ষিত কুকুর। ইংল্যান্ডের নরউডের এক বাগানবাড়ি থেকে ওই কুকুর হারানো ট্রফিটি খুঁজে বের করে। ট্রফির চিরস্থায়ী মালিকানার রেওয়াজ বন্ধ করে দেওয়া হয় ১৯৭০-এ ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জেতার পর।

এরপর থেকে তিনবার নয় তিরিশবার কাপ জিতলেও কোনো দেশ বা দল ট্রফির চিরস্থায়ী মালিক হতে পারে না।

তবে এ ঘোষণার আগেই যেহেতু ব্রাজিল বিশ্বকাপ ট্রফির চিরস্থায়ী মালিক হয়ে যায়, সেহেতু পরবর্তী বিশ্বকাপে আরেকটি বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ১৯৭১ সালে ফিফা নতুন বিশ্বকাপের ডিজাইন আহ্বান করে। সারা বিশ্ব থেকে আসা শীর্ষ শিল্পীদের ৫৩টি ডিজাইন থেকে বাছাই করা হয় ইতালির ডিজাইনার সিলভিও গজ্জালির নকশা। আর সে নকশা মতো ট্রফি তৈরি করেন অলংকারবিদ বার্তৈনি। নতুন এ ট্রফি আর জুলেরিমের নামে রইল না। বিশ্বকাপের আয়োজক ফিফার নামেই নামরকরণ হলো বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা; ফিফা কাপ। ট্রফির নকশায় একজন অ্যাথলেটের হাতে উঁচু করে ধরা পৃথিবী প্রকাশ করে বিজয়ীদের হাতে ধরা দিয়েছে বিশ্ব। ১৯৭৪ সালে ফিফা কাপের প্রথম আসর বসে পশ্চিম জার্মানিতে। স্বাগতিক পশ্চিম জার্মানি জিতে নিয়েছিল প্রথম ফিফা কাপ। নিয়ম করা হলো যে দেশ যতবারই শিরোপা জিতুক তাদের আসল ট্রফি দেওয়া হবে না, দেওয়া হবে ট্রফির রেপ্লিকা।

জুলেরিমে থেকে ফিফা কাপের এটাই চলছে ইতিহাসযাত্রা।

Link copied!