করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ হাজার মৃত্যুর মাইলফলক ছাড়াল বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৯৪ জন। আর এর মধ্য দিয়েই দেশে করোনাভাইরাসে মোট ১০ হাজার মৃত্যু ছাড়িয়ে গেলো। নতুন মৃত্যু ৯৪ জন নিয়ে বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিনে দেশে মোট ১০ হাজার ৮১ জন মারা গেলেন।
এর আগে গত বছরেরে ১৬ এপ্রিল দেশে প্রথম কোনো ব্যক্তি করোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর করোনার কালো মাইলফলক ১ হাজার অতিক্রম করে গত ১০ জুন। প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার ১৯৯ দিনের মাথায় মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আর বৃহস্পতিবার (১৫এপ্রিল) সর্বশেষ ১০ হাজার মৃত্যুর মাইলফলক ছাড়ালো বাংলাদেশ।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ১৮৯টি দেশে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমন ঘোষণা আসে।
ওইদিন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর থেকে তিনজনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা দেওয়া হয়। যাদের দুইজন ইতালি ফেরত এবং তাদের একজনের মাধ্যমে আরেক নারী আক্রান্ত হয়েছেন।
২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল প্রথম কোনো ব্যক্তি করোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ওইদিন বিকেলে এ তথ্য জানিয়ে সরকারের রোগতত্ব রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, করোনাভাইরাসে মৃত পুরুষ ব্যক্তিটি বিদেশ থেকে আসা এবং সংক্রমিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পাশাপাশি ওই ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন।
গত ১০ জুন করোনাভাইরাসে ৩৭ জন মারা যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ছাড়ায়। ওই দিন পর্যন্ত দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১০১২জন। গত বছরের জুন মাসের শুরু থেকেই দেশে প্রায় প্রতিদিনই এক হাজারের বেশি লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার ১৯৯ দিনের মাথায় মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ২৮ জনের মৃত্যু হয় বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭জনে। আর ওই দিন পর্যন্ত দেশে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয় ৫ লাখ ২৭৮ জন।
করো্নাভাইরাস নিয়ে দেশের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তির তথ্যাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুন-আগস্টে করোনার প্রধম ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর চিত্র তীব্র। চলতি বছরের মার্চে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ আরো ভয়াবহ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি মৃত্যুর মিছিলে প্রায় প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে ৭০ জনের বেশি মরদেহ। গতকাল বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট মারা যাওয়া মোট সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৯৮৭।
গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে ৯৬ জনের মৃত্যু হয়। এই সংখ্যা এযাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই সময়ে মোট ২৪ হাজার ৮২৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ৫হাজার ১৮৫ জন। এ নিয়ে বুধবার পর্যন্ত দেশে মোট ৭ লাখ ৩ হাজার ১৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনাভাইরাসের এই উর্ধমূখী প্রবণতা ঠেকাতে বর্তমানে দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। লকডাউনের মধ্যেও সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ল।