গণ টিকাদান কর্মসূচির সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকাদান শুরু হচ্ছে রোববার থেকে। সারা দেশে মোট ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দিতে কাজ করবে ২৪০০ টি দল। এগুলোর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৫০টি হাসপাতাল, মাতৃসদন ও ক্লিনিকে সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে।
ঢাকায় টিকাদান কর্মসূচিতে যুক্ত থাকবে ২০৪ টি দল। প্রতি দলে দুজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবী টিকাদান কাজে যুক্ত থাকবেন। প্রতি দল দৈনিক ১৫০জনকে টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। দৈনিক সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে। তবে প্রথমদিনে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রথম দিন টিকা দেওয়ার সময় গ্রহীতাকে বলে দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজের তারিখ।
শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি ‘এ’ মানের। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩ লাখ ২৮ হাজার মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, ঢাকা শহরে ৫০ টি হাসপাতালে ও ঢাকার বাইরে সারা দেশে ৯৫৫টি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। প্রথম পর্যায়ে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এ পর্যন্ত মাত্র ৩ লাখ ২৮ হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছেন। তবে এ নিবন্ধনের হার কম। তা ছাড়া নিবন্ধন অ্যাপও চালু হয়নি। এ পর্যন্ত যারা নিবন্ধন করেছেন, তাদের অনেকেই জানেন না কবে তাঁরা টিকা নিতে পারবেন। টিকা নেওয়ার ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণাও কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
রোববার যারা টিকা নেবেন, তাদের অনেকের কাছেই শনিবার বিকেলের মধ্যে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পৌঁছে গেছে। যারা নিবন্ধন করেছেন, তাদের তালিকা দেশের সব টিকাকেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। কেন্দ্র থেকে কোন দিন কারা টিকা নেবেন, সেটা নির্ধারণ করা হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান গত বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, প্রথম দফায় ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। সরকারের হাতে এখনো ৭০ লাখ টিকা আছে। করোনার টিকাদান কত দিন চলবে, তা এখনো কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে নিবন্ধন করলেও সবাই টিকা সবাই পাবেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদানকারী মা টিকা নিতে পারবেন না।
যিনি জ্বরে ভুগছেন তিনি টিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর চার সপ্তাহ পার হয়নি এমন ক্ষেত্রে টিকা নেওয়া যাবে না। ওষুধে অ্যালার্জি আছে এমন ক্ষেত্রে টিকা না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গত ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে টিকাদানের মাধ্যমে দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। করোনার টিকাদান কর্মসূচি ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে প্রথম সারির পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মীকে এ টিকা দেওয়া হয়।
উদ্বোধনের পর দেশের মানুষকে টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাঁরাও টিকাদানকেন্দ্রে যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন।
করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ নামের ওয়েব পোর্টালে (https://surokkha.gov.bd/)
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৩০৫ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ৪১৭ জন। গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার ২ দশমিক ৫১। আর আক্রান্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫২। শুক্রবার শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৭৯।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ হাজার ১৯০ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৪১ জন।
দেশে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনায় আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। এখন এটা কমের দিকে। এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৭ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৮টি। সেই হিসাবে মোট আক্রান্তের হার ১৪ দশমিক ৩৯।
বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। দেশে সংক্রমণ শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমতে শুরু করেছিল। মাস দুয়েক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের গড় দুই হাজার ছাড়ায়। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে নতুন রোগী শনাক্ত এবং শনাক্তের হার কম। চলতি বছরের অধিকাংশ দিন এক হাজারের কম রোগী শনাক্ত হয়েছে।