৭ দিন ধরে হাসপাতালে লড়াই করছে ৭ বছরের শিশু আসাদ। মহাখালির দক্ষিন পাড়ার মাহবুবুর রহমানের ছেলে আসাদ। তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার দুই দিন পর টেস্ট করানো হয় তার। টেস্ট ডেঙ্গু পজিটিভ আসলে তাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর শিশু হাসপাতালে।
দ্য রিপোর্টের সাথে আলাপকালে আসাদের বাবা মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৩-১৪ তারিখ দুইদিন ওর জ্বর ছিল। কোন মতেই না কমায় টেস্ট করিয়ে দেখি ডেঙ্গু হয়েছে। এখন এই হাসপাতালেই কাটছে আমাদের দিনকাল।
তার এলাকায় মশার উপদ্রব কেমন জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, এলাকায় মশা নিধনের কোন ওষুধ দেয়া হয়না। শুধু ধোঁয়া দেয়া হয়। এতে মশা মরেনা, ড্রেন থেকে উপরে চলে আসে।
আসাদের মতো আরো অনেকে ভর্তি রয়েছেন শিশু হাসপাতালের ২নং ওয়ার্ডে। কাউকে সেখান থেকে নিতে হচ্ছে আইসিউতেও। কেউ আইসিউ থেকে ফেরে আবার কেউ ফেরে না।
এই রকম একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা বললেন সুমন রহমান। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমার মেয়ে রেহেনার পাশের বেডেই মহাখালির দিপু মিয়ার ছেলে ইসমাইল ভর্তি হয়েছিলো। দুই দিনের মাথায় ওকে আইসিউতে নিয়ে যায়। ১৯ তারিখে শুনি বাচ্চাটা মারা গেছে। ওকে নিয়ে কত কথা বলছিলো ওর মা। পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলো সেদিন। প্রতিদিনই এমন অনেক নির্মম ঘটনার জন্ম হয় শিশু হাসপাতালে।
জাতীয় শিশু হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১২৩ জন। সেখানে চলতি আগস্ট মাসের প্রথম তিন সপ্তাহেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৬৭ জন। মারা গিয়েছেন ৪ জন।
আক্রান্ত ৩৬৫ জনের মধ্যে ১ বছরের নিচে ৩৬ জন, ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ১০৫ জন, ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৩৮ জন এবং ১০ বছরের উর্দ্ধে ৮৭ জন।
হঠাৎ করে আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারন জানতে চাইলে শিশু হাসপাতালের মহামারি বিশেষজ্ঞ কিংকর ঘোষ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ’এই সময়ে যে বৃষ্টি হচ্ছে তা ডেঙ্গু মশার বংশবৃদ্ধির একটি বড় কারন। মুষলধারে বৃষ্টি হলে ডেঙ্গুর হার এতো বাড়তো না। সামনে বৃষ্টি কমলে হয়তো এই হার কমতে পারে বলে জানান তিনি।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি বলে দাবি করেন শিশু হাসপাতালের কতৃপক্ষ। তাদের মতে প্রায় ৬১ শতাংশ রোগী উত্তর সিটি করপোরেশনের। এ বিষয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ’প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ যাবতকালে সর্বোচ্চ রোগী এই মাসেই ভর্তি হয়েছে। রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এইভাবে রোগী বাড়তে থাকলে চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে যাবে’। ডা. কুমার আরো বলেন, ’পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রথম দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি থাকলেও এখন উত্তরে বেশি। আক্রান্তের হার প্রতিদিন বেড়েই যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিশেষ অভিযান চালানোর কথা জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উত্তর সিটির অর্ন্তভূক্ত যে স্থানগুলোকে ঝুকিপূর্ন বলে দাবি করেছে সেসব স্থানে আমরা বিশেষ অভিযান চালানোর ব্যবস্থা করছি।
উল্লেখ্য, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৬ জন। তার মধ্যে ঢাকায় ২৪৩ জন ও ঢাকার বাইরে ৩৩ জন।