করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে তিন দফা বাড়িয়ে প্রায় দেড় মাস চলছে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’। আগামী রবিবার (২৩ মে) বিধিনিষেধ শেষ হবার কথা হলেও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ নিশ্চিতে জোর দেওয়ার দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এ অবস্থায় বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও সপ্তাহখানেক বাড়িয়ে মে মাস পর্যন্ত বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
জীবিকার প্রশ্নে বিধিনিষেধ শিথিল
তবে এখনো করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার নিরাপদ মাত্রায় কমে না আসায় বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মত রয়েছে। অন্যদিকে সংক্রমণের হার কিছুটা কমে আসায় জীবিকার প্রশ্নে অনেকেই বিধিনিষেধ শিথিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধির ওপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ শতভাগ কার্যকর করা গেলে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব। তবে বিধিনিষেধন নতুন করে বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে রবিবার।
সতর্ক অবস্থানে সরকার
সরকার যদি আরও সর্তকভাবে মোকাবিলা করতে চায়, তবে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে বলে একটি সূত্রে জানা যায়। অর্থাৎ বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখা এবং না রাখা— দুই দিক থেকেই চিন্তা করছে সরকার। এর মধ্যেই চলমান বিধিনিষেধ ৩১ মে পর্যন্ত বহাল রাখার সুপারিশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সূত্রে জানা গেছে, এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে রোববার (২৩ মে) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।
সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের আশঙ্কা ছিল ঈদের পরে সংক্রমণ বেড়ে যাবে। সেদিক থেকে এ সপ্তাহটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী সে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই আমরা বাস্তবায়ন করব। তবে বিধিনিষেধ বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা যাবে না। কারণ এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে দুঃচিন্তা
আগে গত সোমবার (১৭ মে) সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে চলমান বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার পক্ষে মতামত তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছিলেন, আমরা এই বিধিনিষেধ আরও বাড়ানোর সুপারিশ করব। সেখানে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রুখতে সীমান্ত বন্ধ রাখাসহ দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ-ট্রেন বন্ধ রাখার প্রস্তাব আমাদের থাকবে।
পরদিন কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বিধিনিষেধের মেয়াদ নতুন করে বাড়ানোর কোনো সুপারিশ করেনি। তারা এ ক্ষেত্রে মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ অনুসরণের ওপরে জোর দিয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। এর আগে, এ বছরের মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে থাকলে ৫ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ জারি করে। সপ্তাহখানেক পরে ১৪ এপ্রিল থেকে আরও কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। তিন দফায় সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ আপাতত শেষ হচ্ছে ২৩ মে মধ্যরাতে।