শেষ বিদায়ে ‘মানবিক স্পর্শ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এপ্রিল ১১, ২০২১, ০৩:৩২ পিএম

শেষ বিদায়ে ‘মানবিক স্পর্শ’

করোনাভাইরাস মহামারিতে মৃত্যুপুরী ব্রাজিল। ছোঁয়াচে রোগ বলে বিদায় নেয়ার আগ মুহূর্তেও প্রিয়জনদের এক নজর দেখার সুযোগ পাননি হতভাগ্য লাখো মানুষেরা। অন্তিম বিদায়ের আগে স্বজনহীনতার ভয়াবহ মানসিক যন্ত্রণা কিছুটা হলেও লাঘব করতে অভিনব উপায় বেছে নিয়েছেন ব্রাজিলের এক নার্স। মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকে স্বজনের স্পর্শের অনুভূতি দেয়ার চেষ্টা করেছেন অন্যভাবে।

ঘটনাটি সাও পাওলোর ভিলা প্রাডো ইমার্জেন্সি কেয়ার ইউনিটের। হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত নার্স সেমেই আরাউজো চেয়েছিলেন ইনটিউবেশনে থাকা এক করোনা রোগীর মানসিক কষ্ট কমাতে।

স্বজনবিচ্ছিন্ন ওই নারীকে স্বজনের স্পর্শ অনুভব করাতে চেয়েছিলেন আরাউজো। তিনি রাবারের এক জোড়া গ্লাভসে উষ্ণ পানি ভরে তা ওই রোগীর হাতের ওপরে রাখেন।

দুই জোড়া গ্লাভস এমনভাবে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর হাতের ওপর রাখা হয়, যেন জীবন্ত কোনো মানুষ নিজের দুই হাত দিয়ে তাকে ধরে রেখেছে।

করোনা ওয়ার্ডের এমন দৃশ্যের ছবি ভাইরাল হয়েছে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে।

মহামারির এ সময়ে মানবিক স্পর্শের এ ছবি নাড়িয়ে দিয়েছে মানুষকে, কাঁদিয়েছে স্বজন হারানোর ক্ষত বয়ে চলা লাখো মানুষকে।

ছবিটি টুইটারে প্রথম প্রকাশ করেন আরাউজো নিজেই। ক্যাপশনে লেখেন, ‘রোগীর যত্ন করতে, তাকে স্বস্তি দিতে, তার প্রতি নিজের মমতা জানাতেই এ কাজটি করেছি। শুধু পেশাদার আচরণ হলেই তো চলে না।

‘মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, তার মন কী চাইছে তা বোঝার চেষ্টা করাও আমার দায়িত্ব।’

ছবিটি ভাইরাল হলে এক সাক্ষাৎকারে এই নার্স বলেন, ‘ইনটিউবেশন ভীষণ কষ্টের একটি প্রক্রিয়া। কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসে সাহায্য করতে রোগীর শ্বাসনালিতে টিউব ঢোকাতে হয়।

‘এই ভয়াবহ শারীরিক যন্ত্রণা কিছুটা কমাতে রোগীকে বোঝাতে চেয়েছি যে, তাকে কেউ ধরে রেখেছে। একই সঙ্গে তার ঠান্ডা হয়ে যাওয়া শরীরকে খানিকটা উষ্ণও রাখা সম্ভব এতে।’

চেতনাহীন কিন্তু অনুভূতি কাজ করছে, এমন মানুষকে সহমর্মিতা জানানোর এর চেয়ে ভালো উপায় আর হয় কি না, তা জানা নেই অনেকের।

ছবিটি রিটুইট করা লাখো মানুষের আশা, মৃত্যুপথযাত্রী ওই রোগীর চেতনা ফেরাতে হয়তো এই ভালোবাসাই ওষুধের মতো কাজ করবে।

স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, এমন ঘটনা অবশ্য এটাই প্রথম নয়। আরাউজোর সহকর্মী মারিয়া সান্তোস ও ভেনেসা ফরমেন্টন এর আগেও এ কাজ করেছেন। তারা এই চিকিৎসার নাম দিয়েছে ‘লিটল হ্যান্ড’ বা ‘ছোট্ট হাত’।

মহামারির করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ব্রাজিল। এক বছরে দেশটিতে সংক্রামক এ ভাইরাসে প্রাণ গেছে সাড়ে তিন লাখ মানুষের। আক্রান্ত হয়েছে আরও এক কোটি ৩৪ লাখ মানুষ।

 

Link copied!