একদিকে করোনা অন্যদিকে ডেঙ্গু, এ যেনো এক মহামারির দাপট। মৌসুমী জ্বর-কাশি, সর্দি এখন যেনো মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গি। এর ফলে হাসপাতাল গুলোতে বাড়ছে রোগির চাপ। পাশাপাশি বাড়ছে প্রয়োজনীয় ওষুধের চাহিদা।
ওষুধের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ওষুধের সংকট। তিন ধরনের রোগের প্রতিষেধকের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওষুধ সংকটের আলাপ ফাঁস হতেই দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেড়ে গেছে ওষুধের দাম। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না কোন ওষুধই।
করোনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ নির্ধারন করা হয়েছে। যার দামও সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও এই ওষুধ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়। পাশাপাশি ৪শ-৬শ টাকার ইনজেকশনও বিক্রি হচ্ছে ১৫শ থেকে দুই হাজার টাকায়। এছাড়া ৯৫ হাজার টাকা দামের একটি ওষুধ দেড় লাখে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা যায়, এসব রোগের একটি সাধারণ ওষুধ হলো প্যারাসিটামল। যেটি কোভিড, ডেঙ্গি জ্বর, মৌসুমি সর্দি-কাশি এবং টিকা গ্রহীতারাও সেবন করছেন। এতে ওষুধটির চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় সাময়িক সংকট তৈরি হচ্ছে। রাজধানীর পাশাপাশি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও এ সংকট প্রভাব বিস্তার করেছে।
দোকানদারদের মতে, চারদিকে করোনা ও ডেঙ্গু বেড়ে গেছে। এতে প্যারাসিটামলেরও চাহিদা অতিরিক্ত তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাজারে এর সরবরাহ কমে গেছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
উৎপাদক ও বিক্রেতা সূত্রে জানা যায়, করোনা ও ডেঙ্গুর ওষুধ এইচ, এইচ প্লাস, এইচ এক্স, ফাস্ট, ফাস্ট এক্স, নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সট্রেন্ড সহ বিভিন্ন ওষুধের সংকট তৈরি হয়েছে। এসব ওষুধের বাজার মূল্য ১৫ থেকে ২০ টাকা হলেও এখন দাম রাখা হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
করোনা চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রেমডিসিভির। বেক্সিমকো, হেলথ কেয়ার, স্কয়ারসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এ ওষুধ উৎপাদন করে। করোনার শুরুর দিকে এর দাম ছিলো ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। পরে ঔষধ প্রশাসন এর দাম নির্ধারণ করে দেয়। বেক্সিমকোরটা ২ হাজার টাকা, স্কয়ার সাড়ে ৪ হাজার টাকা এবং হেলথ কেয়ারেরটা সাড়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারন করা হয়। এখন এই ওষুধ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়।
রেমডিসিভির পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ফাবিপেরাভির। এটি মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দেশীয় অনেকগুলো কোম্পানি এটি উৎপাদন করে থাকে। ২শ থেকে ৪শ টাকা এর দাম নির্ধারন করা হলেও এখন এটি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪শ থেকে ৬শ টাকায়।
রেমডিসিভির, ফাবিপেরাভির পাশাপাশি করোনায় যাদের শ্বাসকষ্ট হয় তাদেরকে দেয়া হয় মন্টিলুকাস ও ডক্সিসাইক্লিন। দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত মন্টিলুকাস ওষুধের দাম প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ টাকা। এখন এটি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়। অন্যদিকে ডক্সিসাইক্লিন প্রতি পিসের দাম আড়াই থেকে ৪ টাকা। সেটি এখন ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কেনো ওষুধের দাম বাড়ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাবেক পরিচালক জাকির হোসেন রনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘করোনা ও ডেঙ্গু একসাথে আসায় আমাদের যে নরমাল ওষুধ প্যারাসিটামল, এর চাহিদা দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি অন্যান্য ওষুধের চাহিদাও বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে সরবরাহতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ওষুধের সংকট দেখায় দোকানদাররা বেশি দামে বিক্রি করছে। তবে এটার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।’
শুধু রেমডিসিভির, ফাবিপেরাভির, মন্টিলুকাস ও ডক্সিসাইক্লিন নয় করোনায় আক্রান্ত রোগিদের জন্য এনেক্সপেরিন-সোডিয়াম ও বেভাসিজুমাভ ওষুধটি নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয় অনেক চিকিৎসক। এনেক্সপেরিন-সোডিয়াম ওষুধটি দেশীয় বেশকিছু কোম্পানি উৎপাদন করে। এই ইনজেকশন রোগীদের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ব্যবহার করা হয়। এর বাজার মূল্য সাড়ে ৪শ থেকে ৬শ টাকা হলেও এখন এটি বিক্রি হচ্ছে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকায়।
অন্যদিকে ৪০০ এমএল বেভাসিজুমাভের বাজার মূল্য ৯৫ হাজার টাকা। তবে এর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। দেশীয় কোম্পানি হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল এটি বাজারজাত করছে। কালোবাজারি রোধে এই কোম্পানি সরাসরি হাসপাতালে ওষুধগুলো সরবরাহ করে থাকে। এরপরও এগুলো কালোবাজারের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের বাইরে এই ওষুধটি বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকায়।
ওষুধের দাম বৃদ্ধি হয়েছে, এই ধরনের কোন অভিযোগ পায়নি বলে জানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আশরাফ হোসেন। তিনি দ্য রির্পোটকে বলেন, ওষুধের যে দাম ছিলো এখনো সেই একই দাম রয়েছে। দাম বৃদ্ধি হয়েছে এই ধরনের কোন অভিযোগও আমাদের কাছে আসে নেই। আমাদের পক্ষ থেকেও কোন ওষুধের দাম বৃদ্ধি করা হয়নি। তবে এ ধরনের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ যদি আমাদের কাছে আসে, আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, আমাদের কিছু হলেই সবাই প্যারাসিটামল খায়। এর মধ্যে নাপার প্রতি মানুষের চাহিদা অনেক বেশি। তাই নাপার সরবাহে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, যা দ্রতই সমাধান করা হচ্ছে।