ঝুঁকির মুখে জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২১, ২০২১, ০৮:৪৮ পিএম

ঝুঁকির মুখে জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ

গাজীপুর জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদসহ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওযার পর এবার জাহাঙ্গির আলমের মেয়র পদও ঝুঁকির মুখে রয়েছে। শুক্রবার (২০ নভেম্বর) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কটূক্তি করায় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়। শুধু তাই নয়, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে মামলা করারও নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নাম না প্রকাশের শর্তে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক জ্যেষ্ঠ্য নেতা বলেন, “জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে অপসারণ কেবল সময়ের দাবী।”

অপর আরেক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ নম্বর ধারায় মামলা করতে যাচ্ছে।”

আইনের ২১ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণা ও মদদ দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর সর্ব্বোচ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড কিংবা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।

উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী যিনি আবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতাও তিনি বলেছেন, “জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ছাড়াও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তহবিল তছরূপের মামলাও করা হতে পারে।”

স্থানীয় সরকার আইনে বলা আছে, দলীয় প্রতীকে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো কারণে ওই সংসদ সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে ব্যক্তি নির্বাচিত হওয়ার পরও সংসদ সদস্য পদ হারাবেন। তবে কোনো মেয়রকে দলীয় সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হলে মেয়র পদে থাকতে পারবেন কি না, সেটি স্থানীয় সরকার আইনে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা নেই।

দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচনের বিষয়টি ২০১৫ সালে সিটি করপোরেশন আইনে সংযুক্ত করা হয়। আইনের ৩২ ধারায় নতুন ৩২ক ধারা সন্নিবেশিত করা হয়। সেখানে বলা আছে, ‘কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কোনো ব্যক্তিকে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হইবে।’

বিষয়টি স্পষ্ট করে উচ্চ আদালতের ওই আইনজীবী বলেন, “দলীয় পদ হারানোর ফলে সংসদ সদস্য পদ চলে গেলেও স্থানীয় সরকার আইন-২০১৫ তে এমন কোন বিধান যুক্ত হয়নি। ফলে, জাহাঙ্গীরের দলীয় পদ গেলেও তার মেয়র পদ যাবে না।”

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানিয়েছেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চাইলে স্যুয়োমটো রুল এনে জাতীয় চেতনা এবং ইতিহাস নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে জাহাঙ্গীরকে অপসারণ করতে পারে।”

এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্তত ২০ জন কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীরের মেয়র পদে থাকা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। এমতাবস্থায় জাহাঙ্গীর আলমের মেয়র পদ শঙ্কার মুখে পড়তে যাচ্ছে। 

এর আগে, গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় গত শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়।

সেসময়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, “জাতির পিতা এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ায় তার (জাহাঙ্গীর) বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিব।”

ফলে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমের অপসারণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

তবে শনিবার (২০ নভেম্বর) জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, এসব তার বিরুদ্ধবাদীদের ষড়যন্ত্র। তার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝানো হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবেন এবং দলীয় সিদ্ধান্ত রিভিউ করার আবেদন জানাবেন।

Link copied!