ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আয়োজিত কাওয়ালী অনুষ্ঠানস্থল এবং আয়োজকদের উপর হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টিএসসির সঞ্জীব চত্বরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। কাওয়ালি ব্যান্ড ‘সিলসিলা’ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। রাত নয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলার কথা থাকলেও হামলার পর পণ্ড হয়ে গেছে।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ
আয়োজকদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা এই হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। তারা জানান, গত সপ্তাহে তারা টিএসসির পরিচালক আকবর হোসেনের অনুমতি নিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে টিএসসির সামনে তৈরি মঞ্চে পূর্বঘোষিত কাওয়ালি গানের আসর শুরু হয়। সাড়ে ছয়টার দিকে টিএসসি ভবনের ওপর কাওয়ালির আয়োজকদের সাঁটানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন একদল শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে তাঁরা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মারধর শুরু করেন, পাশাপাশি ভাঙচুর করেন অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও দর্শকদের বসার চেয়ার। এ সময় কাওয়ালি শিল্পীদেরও মারধর করা হয়। হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন।
কয়েকদফা বাধা দেয়া হয় অনুষ্ঠানে
আয়োজকদের অন্যতম হুজাইফা বলেন, “আজকে আমরা কাজ শুরু করার আগে টিএসসির পরিচালক আকবর তাদেরকে জানান, সাদ্দাম ফোন দিয়ে এই প্রোগ্রাম করতে নিষেধ করেছে। তিনি আমাদের সাদ্দামের সাথে কথা বলতে বলেন।”
এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন বলেন, “কাওয়ালির আয়োজনের শুরু থেকেই ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। অনুষ্ঠান উপলক্ষে টিএসসি ভবনের ওপর টাঙানো ব্যানার খুলে ফেলে। পরে তারা আরেকটি ব্যানার টাঙান। এই অনুষ্ঠানের জন্য টিএসসি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া ছিল। অনুষ্ঠানের জন্য যার কাছ থেকে সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, তিনি হুট করে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে বলেন, তিনি সেগুলো দিতে পারছেন না। পরে অন্য জায়গা থেকে সাউন্ড সিস্টেম এনে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এর মধ্যেই হামলার ঘটনা ঘটে।”
হামলার জন্য ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে দায়ী করে আকরাম হোসাইন, “এই হামলার পেছনে তার ইন্ধন ছিল। হামলার সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি তাঁর কর্মীদের দিয়ে আমাদের ব্যানার খুলে ফেলেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের মঞ্চ ভেঙে ফেলেছেন, অনুষ্ঠানের চেয়ার ভাঙচুর করেন। আমাদের শিল্পীদের ওপর তারা হামলা করেছেন।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন, “হামলার প্রশ্নই আসে না৷ আমরা জানতে পেরেছি, এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আয়োজকদের মধ্যে নানা ধারা-উপধারা তৈরি হয়েছিল। শরিয়াহ ও তরিকা অনুযায়ী কাওয়ালি সহি কি না, নারীরা আসতে পারবেন কি না, এভাবে গান আয়োজন করা ঠিক কি না—এসব নিয়ে আয়োজকদের মধ্যে একধরনের সংঘর্ষের আবহ ছিল। এরই বহিঃপ্রকাশ আজকে টিএসসিতে ঘটেছে। এর সঙ্গে যাঁরা ছাত্রলীগের সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করেন, তাঁরা আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মনগড়া ও কল্পনাপ্রসূতভাবে এটি করছেন।”
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, “করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে তাদেরকে পোগ্রাম করতে বারণ করা হয়েছে কিন্তু তারা প্রশাসনের কথা শোনেনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ছাত্র সংগঠন থেকেই সহযোগীতা পাই না।”
তিনি আরও বলেন, “কারা হামলা চালিয়েছে জানা যায়নি। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি আয়োজকরা প্রশাসনের কথা উপেক্ষা করে কেনো এই আয়োজন করেছে তা জানাতে হবে নইলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তারা এই অনুষ্ঠান না করলে এই সমস্যার সৃষ্টি হতো না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।