বিলাসী জীবন যাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে শহর। এয়ারকন্ডিশন, অত্যাধিক ইলেকট্রনিক্সসহ উন্নয়ন কর্মকান্ডে রাজধানী বসবাসের অনুপযোগী হয়েছে। সম্প্রতি ইআইইউ’ মতে ঢাকা বসবাসের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ৩১ অক্টোবর বিশ্ব শহর দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ’’শহর ও সম্প্রদায়কে মূল্যায়ন করি’’।
এয়ার কন্ডিশনে বাড়ছে তাপমাত্রা
গত ২০ বছরে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শুধু রাজধানী ঢাকাই নয়, দেশের প্রায় সব বিভাগীয় শহরগুলোতে একই পরিবর্তন দেখা গেছে। আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে অতিরিক্ত এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার করা। নেদারল্যান্ডসের ভিত্তিক এলসেভিএর Sustainable Cities and Society জার্নালে একদল গবেষকদের গবেষণায় শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও এর কারনের এই তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাটি বলছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকৃতির সাথে সাংঘর্ষিক কার্যকলাপ যেমন ব্যাপক হারে শিল্পায়ন, এয়ার কন্ডিশনিং ও পরিবহন ব্যবস্থা বাতাসে কার্বনডাই অক্সাইড বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি বাণিজ্যিক ভবনে যত্রতত্র এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয়। এই এয়ার কন্ডিশন ঘরকে ঠান্ডা রাখতে বাহিরে প্রচুর পরিমান তাপমাত্রা নির্গমন করে থাকে। আর যেহেতু তাপমাত্রা বাড়ছে সেই দিকে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার ফলে একটা দুষ্টুচক্রে নিমজ্জিত হচ্ছে নগরবাসী।
গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান বলেন, বৃহৎ সবুজায়ন প্রকল্প ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ সম্ভব না। আর শুধু গাছ লাগালেই হবেনা, সবুজায়নকে আমাদের জাতীয় গৃহায়ন নীতির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের জনগণকে এখনই এ সংকটের গুরুত্ব অনুধাবন করে পরিবেশবান্ধব লাইফস্টাইল বেছে নিতে হবে বলে জানান তিনি।
ভবনে কাঁচের দেয়ালে বাড়ছে তাপমাত্রা
বর্তমানে ইটের বদলে অনেকেই দামী কাচ ও সুসজ্জিত কাচের মাধ্যমে ভবন সাজাচ্ছেন। আর এরই ফলে আলোর প্রতিফলন ও কাচ তাপ অপরিবাহী বিধায় রাতের তাপমাত্রা কমছে না। নগর পরিকল্পনাবিদ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নগরায়ণ ও সুশাসন-সংক্রান্ত উপকমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, বর্তমানে কাঁচের ভবন ও বিভিন্ন তাপ বিকিরনকারী পদার্থ দিয়ে ভবন নির্মান করার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে এয়ার কন্ডিশনারের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে তিনিও একমত প্রকাশ করেছেন।
ই বর্জ্যে বাড়ছে ঝুঁকি
নিত্য নতুন প্রযুক্তি পণ্যের ফলে বৃদ্ধি গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ গুণ। বেসরকারি সংস্থা এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এই ই-বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ টন। এখনই এর ব্যবস্থাপনা করা না গেলে সামনের দিনে বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক মেশিনারি মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন (বিইএমএমএ) এর গবেষণা বলছে, প্রতি বছর দেশে যে পরিমান ই বর্জ্য উৎপাদিত হয় তার মাত্র ২০-৩০ শতাংশ পণ্য রিসাইক্লিং বা ধ্বংস হচ্ছে।
সে হিসেবে বছরে প্রায় ৩ লাখ টন ই বর্জ্য এখনও কোন ধরনের রিসাইকেল করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় চলতে থাকলে আগামী ২০২৩ সাল নাগাদ প্রায় ৮ লাখ টন বর্জ্য কোন ধরনের রিসাইকেল বা ধ্বংস করা হবে না।