বেলারুশের রাজধানী মিনস্ক থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দূরত্ব ৪৩৩ কিলোমিটার আর রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে কিয়েভের দূরত্ব ৮৭৪ কিলোমিটার। ক্রমেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ঘুরেফিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসছে বেলারুশ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইউক্রেন যুদ্ধের দুই প্রতিপক্ষের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ দেশটি ইউক্রেন,জর্জিয়া, উজবেকিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাজাকিস্তান, কিরগিস্তান, মালদোভা, তুর্কেমিনিস্তান, ল্যাটভিয়া, বেলারুশের মত ১৫টি দেশ রাশিয়ার নেতৃত্বে পরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ছিলো। তখন বেলারুশ ছিলো পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ।
১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে ওই মর্যাদা হারাতে হয় দেশটিকে। নিজেদের পরমাণু অস্ত্রগুলো বেলারুশ তুলে দেয় রাশিয়ার হাতে। সেই থেকে দেশটি পরমাণু অস্ত্রবিহীন দেশের তালিকায় রয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে যখন গোটা বিশ্ব রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে তখনই নিজেদের হারানো মর্যাদা ফিরে পেতে চাচ্ছে বেলারুশ।
একদিন আগেই বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে গণভোটের আয়োজন করা হয়। গণভোটের বিষয়বস্তু ছিলো, নন-নিউক্লিয়ার স্টেট বা পরমাণু অস্ত্রধারী দেশের তালিকায় থাকা বা না থাকা নিয়ে। বেলারুশের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গণভোটে উত্থাপিত বিষয়টি ৬৫ দশমিক ১৬ শতাংশ ভোটে গৃহীত হয়েছে। সক্ষম ভোটারদের ৭৮ দশমিক ৬৩ শতাংশই ভোটে অংশ নেন।
গণভোটে ৬৫ শতাংশ নাগরিক পরমানু অস্ত্রের পক্ষে ভোট দেয়।
সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে ১০ দিনের সামরিক মহড়ায় অংশ নেয় বেলারুশ।
ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর বেলারুশ রাশিয়াকে নিজেদের সীমান্ত ব্যবহার করতে দিয়েছে। বেলারুশ সীমান্ত দিয়েই ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় চেরনোবিল পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখলে নেয় রুশ সৈন্যরা। বেলারুশে কোন ধরণের হামলা রাশিয়ার উপরই হামলার সমান-সম্প্রতি পুতিনের এমন বক্তব্যও তাদের সম্পর্কের গভীরতার ইঙ্গিত দেয়।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমর্থনেই নিজের নামের সাথে বেলারুশের স্ট্রংম্যান তকমাটাও খুব ভালোভাবেই লাগিয়ে নিয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। প্রায় ৩ দশক ধরে একটানা দেশটির ক্ষমতায় আছেন তিনি। গণতন্ত্র শিকায় তুলে দেওয়ার অভিযোগ থাকলেও পাশে যে পুতিন। তাই দাপটের সঙ্গে টিকে আছেন।
বেলারুশের স্ট্রংম্যানখ্যাত প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো। ছবি: সংগৃহীত
লুকাশেঙ্কো জানিয়েছেন, পশ্চিমারা যদি ন্যাটোকে কাজে লাগিয়ে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়াসহ কয়েকটি দেশে পরমানু অস্ত্র দেয়, তবে বেলারুশ রাশিয়ার কাছে জমা দেওয়া পরমাণু অস্ত্র ফেরত চাইবেন। তাই এ গণভোটকে দেখা হচ্ছে রাশিয়ারই একটি চাল হিসেবেই। কারণ বেলারুশকে ব্যবহার করে আশপাশের দেশগুলোতে খুব ভালোভাবেই নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হবেন একসময়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তা পুতিন।
সম্প্রতি ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ইউক্রেনের তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়ে পুতিন তার পরমাণু অস্ত্র বিষয়ক শাখাকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমন অবস্থায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিতে ইউক্রেনের পথে বেলারুশের সৈন্যরা।
আরও পড়তে পারেন-