রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলের একটি গ্রামে। এতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশে গিয়ে পড়ল রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। তবে এ ব্যাপারে রাশিয়া কোনো মন্তব্য করেনি। বুধবার এমন তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।
বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পোল্যান্ডে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ ন্যাটোর গঠনতন্ত্রের আর্টিকেল ৫ অনুযায়ী এক সদস্যের ওপর হামলা জোটের সবার ওপর আক্রমণ বলে বিবেচিত হওয়ার কথা। ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার পর ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। তাছাড়া জি-৭ জোট ও জাতিসংঘও বৈঠক ডেকেছে।
একজন ন্যাটো কর্মকর্তা বলেছেন, বিস্ফোরণের খবর জোট খতিয়ে দেখছে এবং পোল্যান্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সমন্বয় রক্ষা করে যাচ্ছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরণের বিষয়ে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে টুইট করেছেন ন্যাটোপ্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ।
ন্যাটোপ্রধান আরও বলেন, নিহতদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। ন্যাটো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরামর্শ করছে। সব তথ্যের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
হামলার বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ, রাশিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডে আক্রমণ করেছে। তিনি বলেন, এটি সামষ্টিক নিরাপত্তার ওপর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এটি খুবই বড় ধরনের উসকানি। আমাদের অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।
একটি বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, পূর্বাঞ্চলীয় গ্রামটিতে বিস্ফোরণ পোল্যান্ডে ঢুকে পড়া রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে হয়েছে। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার বিষয়টি তারা নিশ্চিত হতে পারেনি।
এদিকে পোল্যান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ মূহুর্তে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার বিষয়টিকে রাশিয়ার হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে না। ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে পোল্যান্ডের পিওদো গ্রামে। এটি ইউক্রেন সীমান্তের সঙ্গে লাগোয়া একটি গ্রাম।
তবে রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্রই পোল্যান্ডে আঘাত হেনেছে, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র নয়। একজন রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তি বলেছে, রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম নয়। বরং ইউক্রেনের এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অস্বাভাবিক আচরণ করলে এ ঘটনা ঘটতে পারে।
পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা নিশ্চিত হয়েছেন ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়ায় তৈরি হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা এখনো জানাননি ক্ষেপণাস্ত্রটি কোন দেশের। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় তিনি প্রকাশ্যে কাউকে দোষারোপ করেননি।
প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুডা সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র কে বা কারা ছুড়েছে এখনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ নেই। এটি সম্ভবত রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, এর তদন্ত চলছে।
তবে এর মধ্যে পোল্যান্ডে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূততে ডেকে পাঠানো হয়েছে এবং তার কাছে এ ঘটনার জবাব চাওয়া হয়েছে।
এদিকে, ইন্দোনেশিয়ায় বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর সংগঠন জি২০ সম্মেলনের প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেইন জুড়ে তীব্র ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রাজধানী ছাড়াও লিভিভ, পশ্চিমের রিউন, উত্তরপূর্বের খারকিভ, মধ্যাঞ্চলের ক্রিভি রিহ ও পোলতাভা, দক্ষিণের ওদেসা এবং উত্তরের ঝাইতোমিরে রীতিমত ক্ষেপণাস্ত্রের বর্ষণ হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।