জুন ৯, ২০২২, ০৪:৩৮ পিএম
বাংলাদেশকে জলবায়ুর ঝুঁকি থেকে টেকসই ও জলবায়ু সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকার ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, যা মূলত জলবায়ু অর্থায়নের জন্য একটি কৌশলগত বিনিয়োগ কাঠামো। উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ ৮ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা প্রায় ৭ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে এ বিনিয়োগের অর্থায়ন করা হবে।
২০৩০ সালে কমবে কার্বন গ্যাসের নিঃসরণ
পরিবেশ সুরক্ষার অপরিসীম গুরুত্বকে বিবেচনায় নিয়ে সরকার জলবায়ু্র পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাস্তবসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার অনুসরণকে বাধ্যতামূলক করেছে। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আগস্ট ২০২১-এ দেশের হালনাগাদকৃত ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিশন’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় ৬.৭৩ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা প্রাপ্তিসাপেক্ষে আরও ১৫.১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদে দেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সমন্বিত অভিযোজন কৌশল ও করণীয় নির্ধারণকল্পে ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (National Adaptation Plan)’ প্রণয়নের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং ২০০৯ সালে প্রণীত ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা’ হালনাগাদকরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এছাড়া, শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে দেশে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত সকল প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশবান্ধব করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ৮,৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনার বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ১০টি প্রকল্পের মধ্যে ৪টি বাতিল করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৬টিকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ভিত্তিতে নবায়নযোগ্য অথবা গ্যাস-ভিত্তিক করা হবে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আমাদের ৪০ শতাংশ জ্বালানির সংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি।
জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় বিশেষ জোন হচ্ছে
বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক সমীক্ষার মাধ্যমে এ পর্যন্ত দেশের ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। বিগত ১৩ বছরে ৯টি জাতীয় উদ্যান, ১৮টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ৩টি ইকোপার্ক, ১টি উদ্ভিদ উদ্যান, ২টি মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া এবং ২টি বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকাসহ নতুনভাবে মোট ৩৫টি রক্ষিত এলাকা সৃজন করা হয়েছে, যার ফলে বর্তমানে দেশে রক্ষিত এলাকার সংখ্যা মোট ৫১টিতে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে দেশে ৯৫,২৬৫ হেক্টর ব্লক, ২৬,৪৫৩ সিডলিং কি.মি. স্ট্রিপ এবং ৬৮,১১৩ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে এবং বিলুপ্তপ্রায় ১০৬টি বনজ ও ২৪০টি ঔষধি বৃক্ষ প্রজাতি সংরক্ষণ করা হয়েছে। শিল্প কারখানায় ইটিপি স্থাপন কার্যক্রমকে জোরদার হয়েছে। আবার জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ‘ন্যাশনাল ফরেস্ট ইনভেন্টরি’ রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। সমগ্র সুন্দরবনে সরকারি অর্থায়নে স্মার্ট (Spatial Monitoring and Reporting Tools) পেট্রোলিং চলমান আছে। পাশাপাশি, বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে সুন্দরবন সংলগ্ন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ৪৯টি ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে।
জলবায়ু অর্থায়ন সংক্রান্ত যে সব পরিভাষা বর্তমানে ব্যবহৃত হয়, সেসকল টেকনিক্যাল শব্দমালা নিয়ে ‘জলবায়ু পরিবর্তন শব্দকোষ’ প্রকাশ করা হয়েছে।