আয়কর রিটার্ন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব অযৌক্তিক: বিশ্লেষকদের মত

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৭, ২০২২, ০৩:৩৪ এএম

আয়কর রিটার্ন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব অযৌক্তিক: বিশ্লেষকদের মত

জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি) সবাইকে আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাবকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অবাস্তব’ বলে মনে করেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও আয়কর বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, আইন অনুযায়ী, বার্ষিক তিন লাখ টাকার বেশি আয় হলেই কর নিবন্ধন নিয়ে রিটার্ন দিতে হয়। এর চেয়ে কম আয়ের নাগরিকেরা কেন রিটার্ন দেবেন? আর এনআইডিধারী সবাইকে করের আওতায় আনলে হঠাৎ করে ৮-১০ কোটি নিবন্ধিত করদাতা বেড়ে যাবে। এত করদাতার তথ্য ব্যবস্থাপনা করার মতো সক্ষমতা নেই বর্তমান কর প্রশাসনের।

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন দেশে যাঁদের এনআইডি আছে, তাঁদের প্রত্যেকের আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেন। তবে কীভাবে এত মানুষকে করের আওতায় আনা হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি। বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ১২ কোটি লোকের এনআইডি আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব মানলে এনআইডিধারী সবাইকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে প্রথমে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। তারপর বছর শেষে সবাইকে পুরো বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ রিটার্ন দাখিল করতে হবে। কারও বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকার বেশি হলে তাঁকে কর দিতে হবে।

এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক আয়কর বিভাগের সদস্য আমিনুর রহমান মনে করেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে পৃথিবীর কোনো দেশেই আয়কর নিবন্ধন দেওয়া হয় না। জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে আয়কর রিটার্ন দিতে হবে, এমন বিধানও কোনো দেশে নেই। এটি কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। কোনো দেশের পক্ষে জাতীয় পরিচয়পত্রধারীদের আয়করের আওতায় আনা সম্ভব নয়। রিকশাচালক, দিনমজুর, গৃহকর্মী, ভবঘুরে, ছিন্নমূল মানুষ—কমবেশি সবারই জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব মানলে এসব হতদরিদ্র মানুষকে এখন থেকে বার্ষিক রিটার্ন দিতে হবে। আবার এ শ্রেণির মানুষ আয়কর বিবরণীর বিশাল বিশাল ফরম পূরণ করে বছর শেষে বিভিন্ন কর অঞ্চলে গিয়ে রিটার্ন দিয়ে আসবেন, এমনটা ভাবাও বাস্তবসম্মত নয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাব যুক্তিসংগত নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব মানলে হঠাৎ করে ৮-১০ কোটি টিআইএনধারী বেড়ে যাবে। বর্তমান পৌনে এক কোটি টিআইএনধারী ব্যবস্থাপনা করতে পারছেন না কর কর্মকর্তারা। তখন পুরো কর ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

বর্তমানে সারা দেশে যে ৭৬ লাখ টিআইএনধারী ব্যক্তি আছেন, তাঁদের সবার রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও সবাই দেন না। বিদায়ী অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৬ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দিয়েছেন। মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র দেড় শতাংশের মতো রিটার্ন দেন। 

Link copied!