সৌন্দর্য রক্ষার অযুহাতে ট্রেনের জানালায় বসছে না নেট

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৮, ২০২২, ০৪:৫৮ এএম

সৌন্দর্য রক্ষার অযুহাতে ট্রেনের জানালায় বসছে না নেট

রেলপথ সাধারণ মানুষের যাতায়াতে প্রথম পছন্দ হলেও এই পথেই যেন সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক! বিশেষ করে পাথর নিক্ষেপ এখন রেল যাত্রীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। দেশের প্রায় রুটে ভাঙছে ট্রেনের জানালার কাঁচ, আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেনের জানালায় প্রতিরক্ষা নেট লাগানোর দাবি উঠলেও সে বিষয়টি আর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। 

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের পক্ষ থেকে ট্রেনের জানালায় নেট বসবে কি না বা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না, তা জানার জন্য যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, “আমি কয়েকদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। তাই এই বিষয়ে ভাল করে না জেনে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।”

বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসচিব (উন্নয়ন-৩) সুরাইয়া আখতার জাহান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “এমন কোনো খবর আমার কাছে নেই। আমি আছি উন্নয়ন বিভাগে। এমন কোন প্রস্তাবনার কথা আমার কাছে আসেনি।”

সারাদেশে চলাচল করা যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা ৩৫২টি। এরমধ্যে আন্তনগর ট্রেন ৯০টি, লোকাল ১২৬টি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ১১০টি। ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙেছে ১০৩টি। আহত হয়েছেন ২৯ জন।

ট্রেনে নেট লাগানোর পরিকল্পনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “আপাতত ট্রেনের জানালায় নেট লাগানোর কোন পরিকল্পনা নাই। একটা জিনিস মডিফাই করলে সেটার সৌন্দর্য নষ্ট হয়। ট্রেনের বেলাতেও ব্যতিক্রম নয়।” 

দিন দিন পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বাড়ছে আর রেলের সাধারণ যাত্রীরা এর শিকার হচ্ছে। এই বিষয়টি রুখতে কোন পদক্ষেপ কি নেওয়া হচ্ছে? যদি নেওয়া হয় তাহলে সেটি কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, “ট্রেনে যেনো পাথর নিক্ষেপ না হয় সেই বিষয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এবং রেলওয়ের কর্মকর্তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এর পরেও দুই এক জায়গায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলে আসলে কিছু করার নাই।”

অথচ গত ৩ অক্টোবর রাজধানীর রেল ভবনে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে রেলওয়ে গৃহীত ব্যবস্থা ও মিডিয়ার ভূমিকা বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, “চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে কিছু কর্মসূচি নিয়েছে মন্ত্রণালয়। পূর্বাঞ্চলের চারটি জেলার চট্টগ্রাম, ফেনী ও নরসিংদী এবং পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার ১৫টি এলাকায় বেশি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এসব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। সেই সঙ্গে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় হতাহত ঠেকাতে কোচের জানালায় নেট লাগানোর কথাও ভাবছে রেলওয়ে।”

রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। ৩০২ ধারা অনুযায়ী পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

কিন্তু ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হলেও এসব ঘটনায় দেশে এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি দিতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় জড়িত ৮০ ভাগই বস্তির শিশু-কিশোর এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তি। বস্তির শিশুদের আটক করা হলেও প্রমাণের অভাবে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

বেশি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ যেসব এলাকায়

পূর্বাঞ্চলের চার জেলার পাঁচ এলাকা হলো চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকুণ্ড-বাড়বকুণ্ড, ফেনীর ফাজিলপুর কালীদহ এলাকা, নরসিংদী সদর, জিনারী ও ঘোড়াশাল এলাকা।

অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার ১৫ এলাকা হলো চুয়াডাঙ্গার আউটার, নাটোরের আব্দুলপুর রেলওয়ে স্টেশন, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন, পাবনার মুলাডুলি রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, পঞ্চগড় জেলা ও ঠাকুরগাঁও জেলার কিসমত-রুহিয়া।

এ ছাড়া পাবনার ভাঙ্গুরা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, বগুড়ার ভেলুরপাড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন, সলপ রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, পাবনার বড়াল ব্রিজ রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, খুলনার ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা।

Link copied!