সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১, ০৯:২৭ এএম
বিশ্বে সিএফসির (ক্লোরোফ্লোরো-কার্বন) মতো ক্ষতিকর পদার্থের ব্যবহার কমে যাওয়ায় ছোট হয়েছে ওজোন স্তরের ছিদ্র। আর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে আসছে। মন্ট্রিল প্রটোকলে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যগুলো ব্যবহার ও আমদানি নিষিদ্ধ করে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই। এছাড়া আর্থিক সহায়তা ও প্রযুক্তি পেলে আগামী নয় বছরে প্রায় নয় কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কমানো হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিশ্ব ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হবে দিবসটি।
৪১ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করবে বাংলাদেশ
বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্বালানি পোড়ানোর কারণে আগামী নয় বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৪১ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হবে, যা জলবায়ুকে পরিবর্তন করবে মারাত্মকভাবে, এর মধ্যে শর্তহীনভাবে প্রায় দুই কোটি ৮০ লাখ টন কার্বন কমানোর আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ। তবে উন্নত প্রযুক্তি ও অর্থ সহায়তা পেলে আরও প্রায় সোয়া ছয় কোটি টন নিঃসরণ কমানো যাবে, সব মিলে যার পরিমাণ দাঁড়াবে নয় কোটি টন।
জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থা ইউএনএফসিসিসি’র কাছে জমা দেওয়া ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশন (এনডিসি) নামে পরিচিত এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কার্বন নিঃসরণ কমানোর এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। প্রতিবেদনটি গত ২৬ আগস্ট জাতিসংঘে জমা দেয়া হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্লাইমেট সেলের পরিচালক মির্জা শওকত আলী জানান, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী জাতিসংঘের প্রত্যেকটি দেশকে নিজদের এনডিসিতে জানাতে হয় যে, কে কতটুকু কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গত হওয়া মোট ৪১ কোটি টন কার্বনের মধ্যে নিঃশর্ত এবং শর্ত সাপেক্ষে প্রায় নয় কোটি টন নিঃসরণ কমাতে পারবে বাংলাদেশ, যা মোট নিঃসরিত কার্বনের প্রায় ২২ শতাংশ।
জ্বালানি থেকে অর্ধেক কার্বন নিঃসরণ হয়
বর্তমানে বাংলাদেশে নিঃসরণ হওয়া কার্বনের অর্ধেকের বেশি আসে জ্বালানি খাত থেকে (৫৫ ভাগ)। এই খাতে নিঃসরণ কমাতে ২০৩০ সালের মধ্যে বাড়তি ৯১৮ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। পাশাপাশি, কয়লার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিদ্যমান গ্যাস চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
কার্বন নিঃসরণের আরেক খাত পরিবহন। শহরাঞ্চলে যানজটের কারণে যানবাহন রাস্তায় আটকে থাকে এবং অধিকাংশ গাড়ির ইঞ্জিন সচল থাকায় বাড়তি কার্বন নিঃসরিত হয়। এছাড়া ইটভাটাগুলোতে আগুন ছাড়া বিদ্যুতের মাধ্যমে ইট তৈরি চালু করে এই খাত থেকে ১৪ ভাগ কার্বন নিঃসরণ কমানো হবে বলেও জানানো হয়।
বাড়তি নিঃসরণ কমাতে প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তি ও অর্থায়ন
প্যারিস চুক্তির আগে বিদ্যমান কিয়োটো প্রটোকল অনুযায়ী উন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমাতে বাধ্য ছিল কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। এই চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যেক দেশ নিজদের এনডিসি জমা দেবার পাঁচ বছর পর এনডিসি অনুযায়ী দেশগুলো নিঃসরণ কমিয়েছে কি না তা বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চেয়ার বাংলাদেশ।
ওজোন স্তর কি?
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি ধরে রাখছে। মানুষের সৃষ্ট কিছু ক্ষতিকর গ্যাস/দ্রব্য যেমন—সিএফসি, হ্যালন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ব্রোমাইড ইত্যাদির কারণে ওজোন স্তর ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে চলেছে। বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের বিকল্প ব্যবহার জনপ্রিয় করা এবং ওজোন স্তরের গুরুত্ব ও এর সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৬ সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব ওজোন দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ১৯৯৫ সাল হতে প্রতিবছর আন্তর্জাতিকভাবে ওজোন দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ওজোন স্তর : আমাদের, খাদ্য ও টিকা সুরক্ষায় রাখে।’
দ্রুত পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘ওজোন স্তরে ছিদ্র হওয়ার খবরের পর এর কারণ বের করে ১৯৮৫ সালে ভিয়েনা কনভেনশন এবং ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ কানাডার মন্ট্রিলে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা সংবলিত ‘মন্ট্রিল প্রটোকল’ করা হয়। এই প্রটোকলের মাধ্যমে ওজোন স্তরের ক্ষতি করা দ্রব্যগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশ মন্ট্রিল প্রটোকলে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যগুলো ব্যবহার ও আমদানি নিষিদ্ধ করে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই।’
তিনি জানান, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এসি, ফ্রিজ, এরোসলে কুলিং এলিমেন্ট হিসেবে সিএফসি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু মন্ট্রিল প্রটোকলে সইয়ের পর বাংলাদেশ সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়ে এর ব্যবহার একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে আমাদের দেশে ওজোন স্তরের ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার এখন একেবারেই করছে না। কিন্তু সচেতনতার জন্য এই দিবস পালন করা জরুরি।