করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে বাস-ট্রেন-লঞ্চসহ যাত্রীবাহী সব গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। শিগগিরই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নির্দেশনা আসবে বলেও তিনি জানান।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে মানিকগঞ্জ শহরে সদর ও সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হত-দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সব হাসপাতালের নার্স-চিকিৎসকরা সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “ সব দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। রেস্টুরেন্টে টিকা সনদ ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। বাস-ট্রেন-লঞ্চসহ যাত্রীবাহী সব পরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন করতে হবে। মাস্ক ছাড়া বাইরে গেলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত জেল-জরিমানা করবে।
দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই এখনও অর্থনীতির চাকা ঘুরছে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, “কল-কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে। এই পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।”
প্রসঙ্গত, করোনাভাইারাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতে সব সামাজিক (বিয়ের অনুষ্ঠান, মেলা ইত্যাদি), ধর্মীয় (ওয়াজ মাহফিল) ও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বন্ধ করাসহ ৪ সুপারিশ করেছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কারিগরি কমিটির এই সুপারিশগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেন।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) কোরোনা সংক্রান্ত কমিটিটির ৫০তম সভায় এই সুপারিশ করা হয়। সভা শেষে পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ এ তথ্য জানা গেছে।
কমিটির সিদ্ধান্তগুলো হলো
১. পার্শবর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আমাদের দেশেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। প্রয়োজনে কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের জন্য আইনী ব্যবস্থা যেমন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরামর্শ দেয় কমিটি। শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা, হাত পরিষ্কার রাখা ও নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য সব ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন স্থানে পুনরায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা। নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতের উদ্দেশে সব সামাজিক (বিয়ের অনুষ্ঠান, মেলা ইত্যাদি), ধর্মীয় (ওয়াজ মাহফিল) ও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এ সময় বন্ধ করতে হবে। সভা/কর্মশালার ব্যবস্থা অনলাইন এ করা প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ ও নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের বিষয়ে নিয়মিত নজরদারির বিষয়ে পরামর্শক কমিটি গুরুত্বারোপ করে।
২. শিক্ষার্থীসহ সবাইকে দ্রুত টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৩. সব পয়েন্ট অব এন্ট্রিতে স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন আরও জোরদারকরণে সুপারিশ করা হয়।
৪ . সংক্রমণ বেড়ে গেলে তা মোকাবিলায় হাসপাতাল প্রস্তুতি, বিশেষ করে পর্যাপ্ত সাধারণ ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) শয্যা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেয় কমিটি।