ঢাকায় দূষণ সবচেয়ে কম থাকে বিকেল ৪টার দিকে (সূচক ১২৫ বা ‘সতর্কতামূলক’); অর্থাৎ সর্বনিম্ন দূষণের সময়টাতেও বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণের সুযোগ নেই ঢাকাবাসীর। স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পাঁচ বছরের (২০১৬-২০ সাল) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হবে
রাতের সাথে বাড়ে দূষণও
ঢাকায় বায়ুর মান সবচেয়ে বেশি খারাপ থাকে রাত একটার দিকে। মধ্যরাতে এখানকার বায়ুমানের সূচক থাকে গড়পড়তা (গ্যাসীয় ও কঠিন) ১৬২, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচিত। তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, দৈনিক গড় বায়ুমান উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকায় বিকেল চারটার পর দ্রুত বাড়তে থাকে দূষণ, যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে মধ্যরাতে। এরপর ধীরে ধীরে কমে ভোর ছয়টার দিকে হয় ১৫৪ বা অস্বাস্থ্যকর। দুই ঘণ্টা পর তা কিছুটা বেড়ে হয় ১৫৭। পরবর্তী সময়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দূষণ দ্রুত কমতে থাকে।
বিকেল ৪টা থেকে অফিসগুলো ছুটি হলে রাস্তায় মানুষের চলাচল বেড়ে যায়, সঙ্গে বাড়তে থাকে বায়ুদূষণ। এ সময়ের দূষণ মূলত যানবাহনের। এ ছাড়া সন্ধ্যা ৬টার পর দূষণ বাড়তে থাকে আবহাওয়াগত (বায়ুপ্রবাহ, চাপ ও আর্দ্রতা) কারণে। রাত ১১টার দিকে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সড়ক ঝাড়ু দেওয়া শুরু করেন। এ কারণে সারা শহরে ধুলা উড়তে থাকে। এ ছাড়া রাত ১০টার দিকে ঢাকার ভেতর পণ্যবাহী ভারী ও ক্ষুদ্র যান চলাচল প্রবেশ করে, কিংবা ঢাকা হয়ে অন্য স্থানে যায়।
দূষণের মাস জানুয়ারি
ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হয় জানুয়ারি মাসে। গত এক বছরে এই মাসে গড়পড়তা বায়ুমান সূচক ছিল ২০৭ বা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’। এরপর ফেব্রুয়ারিতে। মাসটিতে গড় সূচক থাকে ২২৩ বা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’।
২০১৭ সালে বায়ুদূষণের ‘দুর্যোগপূর্ণ’ অবস্থা ছিল পাঁচ দিন; ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে ছিল চার দিন করে। আর গত বছর এ অবস্থা ছিল সাত দিন। এই পাঁচ বছরে ঢাকার ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ দিন বেশি ছিল জানুয়ারিতে। গত বছরের জানুয়ারিতে বায়ুমান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ছিল ২৩ দিন। চলতি বছর জানুয়ারির প্রথম ২৫ দিনে তা ছিল ১৫ দিন।
শীতে সর্বোচ্চ ধুলা দূষণ ধানমন্ডিতে, সর্বনিম্ন তেঁজগাও
গত ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি ধুলা দূষণ হয়েছে শীতে। স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ধুলা দূষণ নিয়ে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকাটি। ওই সময়ে সর্বনিম্ন দূষণ ছিল তেজগাঁও ও আহসান মঞ্জিল এলাকায়; সেটিও স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি।
এ ছাড়া প্রাক্-বর্ষা ঋতুতে সবচেয়ে দূষিত এলাকা ছিল শাহবাগ, স্বাভাবিকের চেয়ে সাত গুণ। বর্ষায় সবচেয়ে দূষিত ছিল মিরপুর ও গুলশান এলাকা; স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ। বর্ষা-পরবর্তী ঋতুতে সর্বোচ্চ ধুলা দূষণ ছিল তেজগাঁওয়ে; স্বাভাবিকের চেয়ে সাত গুণ।