ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩, ০৪:২৮ পিএম
সম্প্রতি ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কবরস্থানগুলোর নীতিমালা ২০২২’-এ এই বর্ধিত ফির তালিকা দেয়া হয়। এতে মেয়াদ ও কবরস্থানভেদে এই ফি বেড়েছে সর্বনিম্ন ৪ লাখ টাকা, সর্বোচ্চ ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তালিকায় দেখা যায় কবর সংরক্ষণের ফি বাড়ানো হয়েছে ১০ গুণ।
এ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, কবর দেয়ার জন্য নয়, বরং কবর সংরক্ষণকে নিরুৎসাহিত করতে ডিএনসিসি কবর সংরক্ষণ ফি বাড়িয়েছে। ডিএনসিসির আওতাধীন কবরগুলোর ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা হবে বলেও ঘোষণা দেন ডিএনসিসি মেয়র।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় ডিএনসিসির উন্নয়নকৃত উত্তরা ৪নং সেক্টর কবরস্থান উদ্বোধন করেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক আবেদন আসে কবর সংরক্ষণের জন্য। এভাবে কবর সংরক্ষণ করা হলে কবর দেয়ার জায়গা কমে যাবে। আশা করছি ফি বৃদ্ধির কারণে কবর সংরক্ষণের আবেদন অনেক কমবে এবং সাধারণ মানুষ কবর দেয়ার সুযোগ পাবে।'
ডিএনসিসির কবরস্থানে জনগণ সীমিত ফি'তে দাফনের সুযোগ পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ডিএনসিসির আওতাধীন কবরস্থানে প্রতিটি মৃতদেহ দাফন বাবদ রেজিস্ট্রেশন ফি মাত্র ৫০০ টাকা এবং দুঃস্থ, অসহায় ও বিত্তহীন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ফি মাত্র ১০০ টাকা। এছাড়াও কেউ যদি ১০০ টাকাও পরিশোধ করতে অপারগ হয় তার জন্য বিনামূল্যে দাফনের সুযোগও রয়েছে।'
কবরস্থানসহ অন্যান্য স্থাপনা মেইনটেনেন্সের জন্য সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি জনগণকে, কমিউনিটিকে এগিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে মেয়র আতিক বলেন, এলাকাবাসী ও সোসাইটির নেতৃত্বে সিটি কর্পোরেশনের স্থাপনা, ফুটপাত, মাঠ, পার্কগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। নির্মাণকাজের জন্য গাছ কাটা যাবে না। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি গাছ না কেটে কাজ সম্পন্ন করতে। আমরা সাধারণত একটি গাছ কেটে ৩টি গাছ লাগানোর কথা বলি। কিন্তু এখন বলছি গাছ না কেটেই ৩টি গাছ লাগাবেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নির্ধারিত সময়ে কবর সংরক্ষণের জন্য ফি বাড়িয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রকাশিত তালিকার নতুন ফি অনুযায়ী বনানী কবরস্থানে ২৫ বছরের জন্য একটি কবর সংরক্ষণে গুনতে হবে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা।
ডিএনসিসির নতুন তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ফি বাড়ানো হয়েছে বনানী কবরস্থানে। ২০১৮ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, এই কবরস্থানে ১৫ বছর মেয়াদে কবর সংরক্ষণের ফি ছিল আট লাখ টাকা। নতুন তালিকায় তা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি টাকা। অর্থাৎ বনানীতে ১৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণের ফি আগের চেয়ে ৯২ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। একই কবরস্থানে ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে এখন ফি দিতে হবে দেড় কোটি টাকা, আগে এই ফি ছিল ১৫ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে ফি বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ।
বনানী কবরস্থান বাদেও ঢাকা উত্তর সিটিতে আরও পাঁচটি কবরস্থান আছে। কবরস্থানগুলো হলো- উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এবং রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থান। এর মধ্যে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানটি নতুন। আগে কবরস্থানটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নিয়ন্ত্রণে ছিল।
নতুন তালিকা অনুযায়ী, ১৫ বছরের জন্য উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে কোনো কবর সংরক্ষণ করতে চাইলে ৭৫ লাখ টাকা ফি দিতে হবে, আগে এই ফি ছিল ৮ লাখ টাকা। আর ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ ফি ১৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা করা হয়েছে।
এ ছাড়া উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণের ফি ৬ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে। আর ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ ফি ৭৫ লাখ টাকা, আগে ছিল ১১ লাখ টাকা।
উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। আর ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
একইভাবে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আগে ১৫ বছরের জন্য একেকটি কবর সংরক্ষণে ছয় লাখ টাকা লাগত। এখন এই ফি বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। আর ২৫ বছরের জন্য একেকটি কবর সংরক্ষণে গুনতে হবে ৩০ লাখ টাকা, আগে ছিল ১১ লাখ টাকা।
আর রায়েরবাজারসংলগ্ন কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য একেকটি কবর সংরক্ষণে এখন লাগবে ১০ লাখ টাকা, আগে যা ছিল ৬ লাখ টাকা। আর ২৫ বছরের জন্য একেকটি কবর সংরক্ষণে গুনতে হবে ১৫ লাখ টাকা, আগে ছিল ১১ লাখ টাকা।
ঢাকা উত্তর সিটির কবরস্থানে সাধারণ কবর দিতে নিবন্ধন ফি আগের মতো ৫০০ টাকা রয়েছে। দুস্থ, অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এই ফি ১০০ টাকা রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম।