সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে হাজারো ভোগান্তি নিয়ে রাজধানীতে ফিরছে সাধারণ মানুষ। রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার সাইনবোর্ডে গিয়ে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ,চাঁদপুর, নোয়াখালী এবং কুমিল্লা থেকে তিন চারগুণ ভাড়ায় ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ফিরছে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ।
সাইনবোর্ড মোড়ে গিয়ে দেখা যায় কাঁচপুর ব্রিজ এবং নারায়ণগঞ্জ রুট ধরে মোটরসাইকেল-ট্রাকে করে মানুষ এসে নামছে সেখানে। মোড়ে ভ্যান, মোটরসাইকেল, রিক্সা এবং সিএনজি চালকরা যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তান বলে যাত্রীদের ডাকছে। সাইনবোর্ড থেকে যাত্রাবাড়ির রিক্সা ভাড়া চাইছে ১০০টাকা আর সাইনবোর্ড থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ১৫০টাকা। একই দূরত্বে সিএনজি ভাড়া চাইছে মোটাদাগে ৫০টাকা এবং ১০০টাকা।
মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক মোঃ মুনির হোসেন (৩৯) ঢাকায় ফিরছেন হাসপাতালে ভর্তি ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা কাজে সহায়তা করতে। তিনি দ্যা রিপোর্টকে বলেন, ‘রাস্তায় পুলিশ বাহিনী রয়েছে, তারা সবাইকে চেক করছে। অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স,ট্রাক এবং মোটরসাইকেলে চড়ে ঢাকায় আসছেন আবার অনেকেই চাকরি-বাকরির আশায় কিংবা অন্যকোন প্রয়োজনে আসছেন। কিন্তু পুলিশ সবাইকে সমানভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আমার মনে হয় সরকার এবং পুলিশের এইটা ভাবা উচিৎ যে এই পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন যাদের, তাদের জন্যে একটা সুন্দর সমাধান কীভাবে করা যায়।’ যদিও এই সময়ে সবাই বিপদে তবুও একটা কিছু করা উচিৎ তিনি যুক্ত করেন।
চাঁদপুর থেকে মোটসাইকেল যোগে সাইনবোর্ডে এসেছেন রাকিব হোসেন (২১)। পেশায় রাকিব হোসেন ভ্যান চালক। মাইক্রোতে একহাজার টাকার খরচ নির্বাহ করা অসম্ভব বলে ভেঙে ভেঙে মোটরসাইকেল-অটোরিক্সায় সাড়ে চারশো টাকা ভাড়া দিয়ে সাইনবোর্ড এসে অপেক্ষা করছেন। করোনার ঝুঁকি আর হাজারো ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ঢাকায় আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে রাকিব দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ঘরে খাবার-দাবার নাই। কি করবো ভাই, পেটের দায়ে ঢাকায় আইছি।’
মোঃ আরিফ হোসেন (২৫) গুলশান-২ এলাকায় এক ফার্মেসীতে চাকরি করেন। নিজের বোন আর বোনের ৫-৮ বছরের দুই সন্তানসহ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে কোথায় যাবেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘আর কোন উপায় নাই, চাকরি বাচাইতে হবে। চাকরি না বাচলে এমনেও মরতে হবে। যতো টাকাই লাগে যাওয়াতো লাগবেই। ’
এছাড়া সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকাগামী একাধিক যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায় বর্তমান কঠোর বিধিনিষেধ মাথায় নিয়ে যারা ঢাকা ফিরছেন তাদের অধিকাংশই জরুরি প্রয়োজন সামনে রেখে রাস্তায় বের হয়েছেন। টীকা গ্রহন করতে কিংবা অসুস্থ কোন স্বজনের সহায়তায় নিরুপায় হয়ে রাজধানীর উদ্দেশ্যে তাদের যাত্রা। সাইনবোর্ড পুলিশ বুথের দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যেও তার প্রতিফলন পাওয়া যায়।