জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পরে দলটির নেতৃত্বের জায়গা নিয়ে চলছে দ্বন্দ্ব। দলের এক নেতা আরেক নেতার নির্দেশনা মানতে নারাজ। সর্বশেষ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডাকা নিয়ে এই দ্বন্দ্ব আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। জাপা মহাসচিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দলের কাউন্সিল আহবান করার এখতিয়ার শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের রয়েছে। বেগম রওশন এরশাদ কোনোভাবেই কাউন্সিল ডাকার অধিকার রাখেন না।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক চিঠির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডাকার বিষয়টি জানানো হয়।
জাতীয় সংসদের প্যাডে লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, বেগম রওশন এরশাদ আগামী ২৬ নভেম্বর পার্টির দশম কাউন্সিল ডেকেছেন। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডাকার অধিকার বেগম রওশন এরশাদের নেই। কারণ তিনি দলের কোনো পদে নেই।
কাউন্সিল ডাকার বিষয়ে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, “ তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনেছি। কাউন্সিল ডাকার কোনো এখতিয়ার ওনার (রওশন) নেই। কারণ দলের কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার শুরু চেয়ারম্যানের। তিনি (জিএম কাদের) তো জানেন না এটা।”
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষক পার্টির সভাপতি মো. সাইদুর রহমান টেপা রাত ১১টার দিকে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের উপধারা ১২/১/২ অনুযায়ি প্রেসিডিয়াম মিটিংয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতামত ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ি কাউন্সিল ডাকাসহ যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দলের শুধুমাত্র চেয়ারম্যান সংরক্ষণ করেন। এক্ষেত্রে দলের কোনো প্রধান পৃষ্ঠপোষক বা অন্য কেউ দলের কাউন্সিল ডাকার অধিকার রাখেন না।”
বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব ও এরশাদ মুক্তি পরিষদের সাবেক সভাপতি গোলাম মসীহ্’কে প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বলে রওশন এরশাদের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের সংবাদমাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পার্টির গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এমপি আহবায়কের দায়িত্ব পালন করবেন।
এতে পার্টির পাঁচ কো চেয়ারম্যান ও বর্তমান মহাসচিবকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে। তারা হলেন ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রহুল আমিন হাওয়ালাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নু ও মিসেস সালমা ইসলাম।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বিরোধী নেতা ও দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ শাহ মোয়াজ্জম হোসেনসহ ত্যাগী নেতাদের ফিরিয়ে এনে নতুন প্রজন্মের সমন্বয়ে নতুন নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গঠনের আহ্বান জানান।
রওশন এরশাদ চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নিয়মাবলী এবং পার্টির মূল আদর্শ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। বর্তমানে পার্টি গঠনতান্ত্রিক গৃহীত আদর্শ, নিয়ম ও নীতিমালা থেকে সরে গিয়ে ভ্রান্তপথে অগ্রসর হচ্ছে।