রাজধানীর গণপরিবহণগুলোতে ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী বিভিন্ন ধরনের হয়রানি-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বলে জরিপের তথ্য দিয়েছে আচল নামে একটি বেসরকারি ফাউন্ডেশন। জরিপের তথ্য বলছে, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ বুলিং, ১৫ দশমিক ২ শতাংশ সামাজিক বৈষম্য, ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ লিঙ্গ বৈষম্য এবং ৮ দশমিক ২ শতাংশ বডি শেমিংয়ের মতো হয়রানির শিকার হয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে এ জরিপ পরিচালিত হয়।
‘ঢাকা শহরে গণপরিবহণে হয়রানি: কিশোরী এবং তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব’ শিরোনামে আঁচল ফাউন্ডেশন ওই জরিপ পরিচালনা করে। শুক্রবার ফাউন্ডেশন আয়োজিত ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে এই জরিপ প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
সংস্থাটি জানায়, জরিপ প্রতিবেদনে রাজধানী ঢাকার বাস, ট্রেন, লেগুনা, রাইড শেয়ারিং ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আজিমপুর, মিরপুর, গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী নারী ও কিছুসংখ্যক গৃহবধূর ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।
ফাউন্ডেশনটি জানায়, জরিপে ১৩ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৮০৫ নারী অংশ নেন। এরমধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬ শতাংশ। জরিপ শুরুর সময়ের ৬ মাস আগ পর্যন্ত হয়রানির মুখামুখি হয়েছেন এমন নারীদের তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। অফলাইন ও অনলাইনে জরিপ করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা হয়।
জরিপটি পরিচালনা করা হয় এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। এসব যৌন হয়রানির মধ্যে রয়েছে গণপরিবহণে ওঠা-নামার সময় চালকের সহকারীর অযাচিত স্পর্শ, বাসে জায়গা থাকার পরও যাত্রীদের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, বাজেভাবে স্পর্শ করা, ধাক্কা দেওয়া ও বাজে মন্তব্য। জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ নারী ঝামেলা এড়াতে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেননি।
সংস্থাটি জানায়, যৌন নিপীড়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যাত্রীর সংখ্যাই বেশি। গণপরিবহণের চালক ও চালকের সহকারীর (হেল্পার) হাতেও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন অনেকে। নিপীড়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা বেশি।
ফাউন্ডেশন জানায়, যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের ৭৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদেরকে অন্য যাত্রীদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ২০ দশমিক ৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদেরকে গণপরিবহণের হেল্পার কর্তৃক এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনুষ্ঠানে জরিপ প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করেন আঁচল ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মো. ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘জরিপে যা উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। সমাজে জেন্ডার ভারসাম্য ও সমতার বিষয়টি যে নেই, তা এ তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য আইনি ও সামাজিকভাবে উপায় বের করতে হবে।’