শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের প্রমাণ মেলেনি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২১, ২০২২, ১২:২৩ এএম

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের প্রমাণ মেলেনি

বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে পুরো ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক। এ ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রধান সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদার বুধবার বিকেলে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বুধবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

২৮ দিন পর ক্লাসে ফিরলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল

২৮দিন পর প্রিয় শিক্ষালয়ে ফেরার অনুভূতি জানাচ্ছেন শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত

অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদার বলেন, ‘১১ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আমাকে ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য পাঁচ কার্যদিবসের সময় বেঁধে দেয়। ১২, ১৩, ১৮, ১৯ এপ্রিল ঘটনার তদন্ত করি। এ সময় মামলার বাদী, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং দশম শ্রেণির যেসব শিক্ষার্থীর সাথে ধর্ম ও বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে কথা-কথাকাটি হয়েছিল, তাদের সবার সাথে কথা বলেছি। এঁদের মধ্য থেকে ১০ জনের লিখিত বক্তব্যও নেওয়া হয়। তাঁদের কারও বক্তব্যে ধর্ম অবমাননার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি।’

আবদুল হাই তালুকদার আরও বলেন, ছাত্ররা গোপনে ক্লাসে মুঠোফোন নিয়েছিল। ছাত্ররা তাঁর বক্তব্যটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রেকর্ড করেছিল। এগুলো পরিকল্পিত ছিল। ছাত্ররা এগুলো স্বীকার করেছে। ছাত্ররা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে, এ জন্য ক্ষমা চেয়েছে। বাইরে থেকে এগুলো কেউ তাদের দিয়ে করিয়েছে কি না, তা কেউ স্বীকার করেনি।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল প্রাইভেট পড়াতেন। অনেক প্রাইভেট শিক্ষার্থী ছিল। এ ছাড়া একজন বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন, তিনি অবসরে গেছেন। এ জন্য বিজ্ঞান ও গণিতের সব ক্লাস হৃদয় মণ্ডল পেয়েছেন। এতে অন্য শিক্ষকেরা ঈর্ষান্বিত হতে পারেন। এসব কারণেও হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে পারে।

হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বুধবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তদন্তে ধর্ম অবমাননার বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমি ও আমার পরিবারের সবাই খুব খুশি। আমার বিশ্বাস ছিল, আমাকে যে বিষয় নিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেটি একদিন না একদিন মিথ্যা প্রমাণিত হবে। তবে এত তাড়াতাড়ি হয়তো হতো না। মিডিয়ার কারণে সম্ভব হয়েছে।’

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে গত ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই দিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৩ ও ২৮ মার্চ আদালতে তাঁর জামিন চাওয়া হয়েছিল। সে সময় আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছিলেন। ১০ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পান হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। ১১ এপ্রিল এ ঘটনা তদন্তে মাউশি মুন্সিগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হাই তালুকদারকে প্রধান করে এক সদস্যের কমিটি গঠন করে।

বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সূত্র জানায়, ২০ মার্চ দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছিলেন হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। সেখানে বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয়ে তাঁর সাথে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের পক্ষে-বিপক্ষে কথোপকথন হয়। এক শিক্ষার্থী ওই কথোপকথনের ভিডিও ধারণ করে। পরে প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দীনকে বিষয়টি জানানো হয়। প্রধান শিক্ষক সেদিনই হৃদয় চন্দ্রকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন এবং শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে বলেন।

তবে শিক্ষার্থীরা স্থানীয় কয়েকজন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানায়। পরদিন সকালে তাঁরা বিদ্যালয়ে এসে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Link copied!