সিলেটের একটি এতিমখানায় দুই মাস ১১ দিন বয়সী এক শিশুমৃত্যুর মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ওই কক্ষের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেখানে দেখা যায়, কর্তব্যরত আয়া শিশুটিকে আছাড় দিয়ে ফেলে পরে বালিশচাপা দেন।
সিসি ক্যামেরার এ চিত্র দেখে গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) রাতে ছোটমণি নিবাস নামক সরকারি এতিমখানা থেকে আয়াকে আটক করেছে পুলিশ। সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি এ এতিমখানা নগরীর বাগবাড়ি এলাকায় অবস্থিত।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ফরহাদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিয়ে আয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাতে হত্যা বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণও হয়েছে। এ ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তরকে মামলা করতে বলা হয়েছে। তা না হলে পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করবে।’
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ জুন গোয়াইনঘাট পুলিশের মাধ্যমে দুই মাসের ওই শিশুকে ছোটমণি নিবাসে দেওয়া হয়েছিল। এক ভবঘুরে নারীর সন্তান এই শিশুর নাম রাখা হয় নাবিল আহমদ। ছোটমণি নিবাসে ১২ জুন থেকে তাকে রাখা হয় নবজাতক দপ্তরে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়া সুলতানা ফেরদৌসী পরিচর্যার দায়িত্বে ছিলেন। ২৩ জুলাই সকালে শিশুটিকে তার শয্যায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে উল্লেখ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে পুলিশকে জানানো হয়। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল রাতে অপমৃত্যু মামলার পর্যালোচনা করে পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি দল। মহানগর পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আজবাহার আলী শেখের নেতৃত্বে এ পর্যালোচনায় হত্যার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়। ছোটমণি নিবাসে যে কক্ষে শিশুটি থাকত, সেখানে সিসি ক্যামেরা আছে জেনে পুলিশের একটি দল গতকাল রাত ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে ২২ জুলাই রাতের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতে শিশুটিকে বিছানা থেকে আছাড় মেরে ফেলে এরপর বালিশ চাপা দিয়ে রাখার চিত্র পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আয়া সুলতানা ফেরদৌসীকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, দুটি বিষয়কে সামনে রেখে পুলিশ শিশুহত্যার ঘটনাটি তদন্ত করছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা—এ দুটিতে জড়িত সন্দেহভাজন সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত অপরাধী চিহ্নিত করা হবে।