১৯৮৫ সালের ১৩ই জুলাই দাতব্য তহবিল গঠনের জন্য অনুষ্ঠিত ‘লাইভ এইড’ কনসার্টটি একযোগে দেখেছে বিশ্বের ১৫০টি দেশের প্রায় ১৯০ কোটি মানুষ।
দুই বছরব্যাপী ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ কবলিত ইথিওপিয়ার নাগরিকদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে মূলত ‘লাইভ এইড’ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন আইরিশ গায়ক, গীতিকার বব গেলডফ এবং বৃটিশ সঙ্গীত প্রযোজক ও গীতিকার মিজ ইয়োর।
কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয় দুটি দেশে। ভেন্যু লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার জন এফ কেনেডি স্টেডিয়াম। বাকি ১৪৮টি দেশে হয় সরাসরি সম্প্রচার। অংশ নেন পৃথিবীর মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ।
তবে, তারও একযুগের বেশি আগে বিটলস এর গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন বন্ধুদের সাথে নিয়ে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে সমবেত হয়েছিলেন বাংলাদেশের জন্য।
পহেলা আগস্ট, ১৯৭১। তখন তুঙ্গে মুক্তির লড়াই। চরম শরণার্থী সংকট, দারিদ্র্য আর অনাহারে জর্জরিত তখন ভূমিষ্ঠ হওয়ার অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে বাংলাদেশ। একই সাথে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এরও ৫০ বছর।
যুদ্ধ-দুর্যোগ, ক্ষুধা-পীড়িত মানুষের জন্য ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিতে চ্যারিটি কনসার্ট আয়োজনের রেওয়াজ সেদিনই শুরু করেছিলেন জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতের পন্ডিৎ রবি শঙ্কর।
বলয় ভেঙ্গে সেদিনের সেই কনসার্ট চিরস্মরণীয় হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিশ্বকে শুধু সচেতনই করেনি ওই কনসার্ট, বরং যুদ্ধকালীন শরণার্থীদের জন্য একটি শক্তিশালী ত্রাণ তহবিল গঠন করতেও ভূমিকা রাখে।
জর্জ হ্যারিসন ছাড়াও বিশ্বের প্রথম এই দাতব্য কনসার্টে অংশ নিয়েছিলেন বিটলসের সাবেক ড্রামার রিঙ্গো স্টার, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী গায়ক বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিসটন, লিয়ন রাসেল এবং ব্যান্ড ব্যাডফিংগার।
তবে, ইতিহাস তৈরি করা এই আয়োজনের মূল উদ্দোক্তা পণ্ডিত রবি শঙ্কর এবং আলি আকবার খান। মূলত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই দুই ভারতীয়ই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত পূর্ব পাকিস্তানের বাস্তুহারা, ক্ষুধার্ত মানুষের কথা হ্যারিসনের কাছে তুলে ধরেছিলেন।
কনসার্টের জন্য লেখা নতুন একটি গান পরিবেশন করেন জর্জ হ্যারিসন। গানের নাম ‘বাংলা দেশ’। বন্ধু রবি শঙ্করের আবেদনের কথা হ্যারিসন তুলে ধরেছেন তার গানে।
পশ্চিমা গানের সাথে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মিশেলে ফিউশন করে গান পরিবেশন করা হয় ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে যেখানে অংশ নিয়েছিলো ৪০ হাজারের বেশি দর্শক। সংগ্রহ করা হয় আড়াই লাখ ডলার।