গত কয়েক মাস ধরে একাধিকবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একই দিনে দলীয় কর্মসূচি দিয়ে তা পালন করছে। আজ ১১ আগস্ট শুক্রবারও দেশের প্রধান এই দুই রাজনৈতিক দল মাঠে নামবে। দেশের প্রধান এই দুই দলের নেতাকর্মীদের সাথে এবার থাকবে তাদের জোট, সঙ্গী ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এতে জনমনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপির গণমিছিল
নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরকারের পদত্যাগসহ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠঅর দাবিতে শুক্রবার জোটের শরিক দল ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গণমিছিল করবে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা বিএনপি ওইদিন দুটি পৃথক গণমিছিল আয়োজন করবে।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরই দলের গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা উত্তরের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর দক্ষিণের গণমিছিলেন নেতৃত্ব দেবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
শুক্রবারের গণমিছিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি বাড্ডা সুবাস্ত টাওয়ার থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত গণমিছিল করবে। এছাড়া একই সময়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত গণমিছিল করবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে গণমিছিলে ঢাকা উত্তরের গণমিছিলে অন্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। দলীয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এই প্রথম বিএনপি জোটের শরিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে
এবারই প্রথমবারের মতো একই সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাঠে নামছে বিএনপির শরিক ও সঙ্গী দলগুলো। বিএনপির পাশাপাশি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এই গণমিছিলে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিল। তবে দলের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে সায় দেয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটও মাঠে
আওয়ামী লীগের ভাষায় ‘বিএনপির নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক’ কর্মসূচির প্রতিবাদে তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামছে নামছে ১৪ দলীয় জোট। ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা ১৪ দলের নেতাকর্মীরা ‘শান্তি সমাবেশ’ নামে কর্মসূচি পালনে রাজপথে থাকবে। শুক্রবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর উত্তরার রাজলক্ষী আমির কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বডুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়— সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এম পি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।
শান্তি সমাবেশ সফল করতে এবার ১৪ দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এই ১৪ দলে রয়েছে-আওয়ামী লীগ, জাসদ ইনু, ন্যাপ (মোজাফফর), সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাসদ (মাহবুব), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল।
দুই পক্ষের কর্মসূচি ঘিরে জনমনে শঙ্কা
রাজধানীতে দুই প্রধান দুই রাজনৈতিক দল তাদের শরিক ও সঙ্গী দল নিয়ে মাঠে নামায় সাধারণ মানুষের মাঝেও চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। গত কয়েক মাস রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত থাকার মধ্যে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে গণমমিছিল বনাম শান্তি সমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে। দুটি সমাবেশ ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা করছে কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে এরকম সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাসে আগুন, পুলিশের লাটিচার্জ ও জলকামানের ব্যবহার দেখেছে রাজধানীবাসী। ওই সময় রাজধানীর অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।