জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন তহবিল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পেয়েছে মাথাপিছু ৩.৯ ডলার যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ।
দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে মাথাপিছু ১৫৫.৯ ডলার পেয়ে এগিয়ে আছে ভূটান। ১০.৮ ডলার মাথাপিছু অর্থপ্রাপ্তি নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নেপাল। আর ৫.৬ ডলার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে শ্রীলংকা।
বাংলাদেশের চেয়ে মাথাপিছু কম তহবিল পাওয়া অন্য চার দেশের মধ্যে আফগানিস্তান পেয়েছে ১.৭ ডলার, ভারত ১.২ ডলার, পাকিস্তান শূন্য দশমিক ৮ ডলার। আর মালদ্বীপের প্রাপ্তির তথ্য পাওয়া যায়নি।
জিডিপি’র ১ শতাংশ ক্ষতি হয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে। পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ আর আফগানিস্তানে ক্ষতি হয় শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। অধিক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এ দেশগুলো মাথাপিছু তহবিল প্রাপ্তির হার কম।
অন্যদিকে ভূটানের জিডিপি হারানোর পরিমাণ শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ, শ্রীলংকা শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ এবং নেপালের ক্ষতি হয় শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ। মাথাপিছু তহবিল প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে এসব দেশ।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভারতের ক্ষতি জিডিপির শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ। সবচাইতে কম জিডিপি ক্ষতি হয় মালদ্বীপের শূন্য দশমিক ০২ শতাংশ।
এক্ষেত্রে ন্যায্যতার বিষয়টি লংঘিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের নির্বাহী প্রধান জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এম জাকির হোসেন খান দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করছে না ধনী দেশগুলো। এছাড়াও দুর্নীতি বা অন্য যে কোন কিছুর কথা বলে বৈশ্বিক তহবিল ছাড় অর্থ ছাড় করতে বিলম্ব গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, যেখানে ক্লাইমেট ইমার্জেন্সির কথা বলা হচ্ছে।”
“যদি উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুত অর্থ না দেয় তবে কার্বন কর আরোপ করতে হবে। ইতিমধ্যে আফ্রিকান দেশগুলো এ বিষয়ে একটি ঐকমতে পৌঁছেছে, বলে জানান তিনি।
যদিও জলবায়ু তহবিলের সমস্ত অর্থ হবে অনুদান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে অর্থ ঋণ তা জলবায়ুগত তহবিল হতে পারে না।
প্যারিস চুক্তির ৪.৯ অনুচ্ছেদে প্রয়োজন এবং অবস্থাভেদে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে তহবিল ও টেকনোলজি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ৪.৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যারা বিরূপ প্রভাবে নাজুক অবস্থায় আছে সে দেশগুলোকে উন্নত দেশগুলো সহায়তা করবে।
এ অবস্থায় জীবাশ্ব জ্বালানি চালিত মোটরযান, নৌ ও আকাশপথে কার্বন কর আরোপের পাশাপাশি প্রবন্ধটিতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর কার্বন কর আরোপের কথা বলা হয়েছে বিশেষ করে প্লাস্টিক সেক্টরে।
এছাড়া উন্নত দেশগুলোকে বলা হয়েছে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলে জমা করতে। উল্লেখ্য, ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে জমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল শিল্পোন্নত দেশগুলো। জি-২০ দেশগুলোকে বলা হয়েছে জীবাশ্ব জ্বালানিতে ভর্তুকির ২৫ শতাংশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জলবায়ু অর্থায়নে ব্যয় করার কথা।
বাংলাদেশ যে পরিমাণ অর্থ পেয়েছে এর মধ্যে ৫২ শতাংশ অনুদান আর বাকি অর্থ এসেছে ঋণ হিসাবে, যদিও শুধু অনুদানকেই জলবায়ু অর্থায়ন বলা যাবে, কোনো ধরনের ঋণকে না।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হক বলেন, “যা ঋণ তা জলবায়ু অর্থায়ন না। জলবায়ু অর্থায়ন বলতে হলে তাকে হতে হবে সম্পূর্ণ অনুদান। এটি উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পুরো বিশ্ব, তার ক্ষতিপূরণ।”