আগস্ট ২৮, ২০২৩, ১১:৩৩ পিএম
টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনিরের বড় ভাই জেলা শাখা আওয়ামী লীগের নেতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা কিশোরী অভিযোগ করেছেন, তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি একথা বলেন। এ সময় কিশোরীর পাশে তার এক ফুপু এবং শিশু সন্তান ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে কিশোরী বলেন, “ধর্ষণের মামলা করার পর থেকেই আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ওই ঘটনায় সন্তান প্রসবের পর তার পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে বড় মনি প্রভাব খাটিয়ে এই ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন বলে আশঙ্কা করছি। টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনিরের বড় ভাই হওয়ায় তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। আমি ও আমার সন্তানের ডিএনএ স্যাম্পল যেন না দিই সেজন্য ধর্ষকের পক্ষ থেকে এক কোটি টাকা ও ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে ওই কিশোরী আরও বলেন, “তারা (বড় মনি, ছোট মনির) আমাকে বিভিন্ন প্রলোভন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। আমাকে ফ্ল্যাট, টাকা দিতে চাচ্ছেন। এখন বড় মনি যদি আমাকে বিয়ে করতে চায়, আমি তাতেও রাজি না। আমি শুধু আমার সন্তানের অধিকার চাই। তারা যাতে প্রভাব খাটিয়ে ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করতে না পারেন সেটি চাই।”
ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার বাবা-মা কেউ না থাকায় আমি অসহায়ের মতো জীবনযাপন করেছি। আমার মামলার বিবাদী বড় মনি আমার আত্বীয় হওয়ায় পূর্বপরিচিত। বিবাদী বড় মনিকে আমার ও আমার ভাইয়ের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা বললে বড় মনি আমাকে সমস্যা সমাধান করে দেবে বলে তার বাসায় ডেকে নিয়ে সুকৌশলে ধর্ষণ করে এবং আমার বিভিন্ন রকমের ছবি তোলে।
ধর্ষণ শেষে আসামি আমাকে ঘটনার বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করতে নিষেধ করে। প্রকাশ করলে আমাকে জানে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। এই ঘটনার পর দু-একদিন পরপর বড় মনি আমাকে একইভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। আমার ছবি দেখিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ফলে আমি গর্ভবতী হই। এ ঘটনা বিবাদীকে বললে আমাকে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকে। পরবর্তী সময়ে বড় মনি গর্ভের বাচ্চার বিষয়ে অস্বীকার করে জোরপূর্বক তার শ্বশুরের বাসায় আমাকে উঠিয়ে নিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে।
কিশোরী আরও বলেন, আমি মামলা করার জন্য টাঙ্গাইল সদর থানায় গেলে থানা পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে রাজি হয়নি। পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি প্রচার হওয়ায় থানা পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়। আসামি আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান। বড় মনি জেলহাজতে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আসামির ডিএনএ পরীক্ষার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন তিনি ডিএনএ স্যাম্পল দিতে গড়িমসি করেন। গত ২১ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশে আসামি ডিএনএ স্যাম্পল দিতে বাধ্য হন।
তিনি আরও বলেন, আসামি ও আমার প্রায় দুই মাস বয়সের বাচ্চার ডিএনএ পরীক্ষার সময় সিআইডির কিছু পুলিশ কর্মকর্তার দ্বারা অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হই। আমি ভুক্তভোগী হয়েও তাদের আচরণে মনে হয়েছে আমি একজন আসামি। আমি লোকমুখে শুনি, এ মামলার ডিএনএ পরীক্ষার ফল পরিবর্তন করতে আসামিদের কোনো পেরেশানি হবে না। সিআইডিতে কর্মরত একজন পুলিশ সুপার ডিএনএ পরিবর্তন করতে আসামিদের পক্ষে সহযোগিতা করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি যাতে ডিএনএ স্যাম্পল দিতে না যাই, সেজন্য এক কোটি টাকা ও একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় বড় মনির পক্ষ থেকে। তাছাড়া টাঙ্গাইলে ছোট মনির ও বড় মনির পক্ষের আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আমাকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে বিদেশে স্থানান্তরসহ সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন। আমি টাকা চাই না। আমি আমার বাচ্চার অধিকার চাই। ডিএনএ স্যাম্পল পরিবর্তন করার জন্য প্রভাবশালী মহলে যে পরিমাণ টাকা বড় মনির পক্ষ থেকে অফার করেছে তাতে আমি ডিএনএ পরীক্ষা ও মামলার সুষ্ঠু তদন্তের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছি।