আগস্ট ২, ২০২৪, ০৯:১২ পিএম
রাজধানীসহ দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শুক্রবার (২ আগস্ট) ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ আহুত প্রার্থনা ও গণমিছিল কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর উত্তরা ও খুলনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
রাজধানীর উত্তরায় জমজম টাওয়ারের সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে তিনজন রাবার বুলেটবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
শুক্রবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ার মোড়ে মাইলস্টোন কলেজের সামনে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ আহুত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুরো উত্তরায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সেই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জমজম টাওয়ারের সামনে অবস্থান নিতে থাকে। আর শিক্ষার্থীরা অবস্থান গ্রহণ করেন মাইলস্টোন কলেজের সামনে।
আকস্মিকভাবেই আওয়ামী লীগ সমর্থকরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করলে শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করে। এরপর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস (টিয়ার শেল) নিক্ষেপ করে।
একপর্যায়ে পুলিশ জমজম টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেয়। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা আবারও প্রধান সড়কে জমায়েতের চেষ্টা করলে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
পরে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে হঠাৎ হেলমেট পরা ও হাতে অস্ত্র-লাঠিসহ কিছু লোক বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। তখন বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন সড়কে আশ্রয় নেন। এ সময় পুলিশও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তোহিদুল ইসলাম বলেন, “বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ট্রেনিং স্কুলে আগুন দিয়েছে। টিয়ার শেল (কাঁদানে গ্যাস) ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সক্ষম হই।”
এ ছাড়া খুলনার জিরো পয়েন্ট, গল্লামারী মোড় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) এলাকায় পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে পুলিশ।
এ সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৯ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
সংঘর্ষের কারণে বিকেল চারটা থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ও রূপসা সেতু বাইপাস সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দু’পাশে আটক পড়েছে শত শত গাড়ি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এরপর তারা মিছিল নিয়ে মজিদ সরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার দিকে যায়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা সোনাডাঙ্গা থানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা থানার ভেতরে অবস্থান নেয়।
বিকেল সোয়া তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। প্রায় আধাঘণ্টা ধরেই চলতে থাকে এই সংঘর্ষ।
এ ছাড়া দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পরে বিকেল চারটার দিকে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। কিছু পুলিশ জিরো পয়েন্ট এলাকায় ও কিছু পুলিশ গল্লামারী মোড়ে অবস্থান নেয়। কয়েক দফা শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পুলিশ কিছুটা পেছনে সরে আসতে বাধ্য হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের দিকে যেতে চাইলে সন্ধ্যা ছয়টায় গল্লামারী মোড়ে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশ পিছু হটলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে, খুলনা মেডিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের পর সিরাজুল ইসলাম, আবির, নীরব, নাবিল, মিজান, সৌরভ, আবদুল্লাহ, রায়েব সুলতানা রাইবা এবং রুবিনা ইয়াসমিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরে রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা গুলি লেগেছে।
সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, “শিক্ষার্থীরা থানার গেটে কিছু ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। এতে কেউ আহত হয়নি।”
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমসি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি পালন করার কথা ছিল। কিন্তু তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। বহু পুলিশ আহত হয়েছে।”
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার দাবি করেন, “তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল নিরস্ত্র শিক্ষার্থী ওপর পুলিশ অহেতুক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে খুলনা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সঠিক সংখ্যা পরে জানানো হবে।”