সময়টা ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন। তৎকালীন সংবিধান অনুযায়ী সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা ছিল। হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি বিএনপিপন্থী।
কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, তারা সেটি মেনে নেবে না।
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলো ২৮ অক্টোবর পল্টনে সমাবেশ ডাক দেয়।
কে এম হাসান যদি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয় তাহলে সারাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যাতে লগি-বৈঠা হাতে ঢাকায় চলে আসে, সেই নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে লগি বৈঠা আন্দোলন হিসেবে পরিচিত।
এছাড়া বিএনপি নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় প্রায় ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
তারপরেও সংঘাত ঠেকানো যায় নি। সংঘাতে ঢাকায় জামায়াত–শিবিরের ৪ ও ওয়ার্কার্স পার্টির ১ কর্মীসহ সারা দেশে ১১ জন নিহত হন। কে এম হাসান শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেননি।
এই লগি বৈঠা আন্দোলনের পর ক্ষমতার সূর্য সেই যে বিএনপি শিবিরে অস্ত গেল, আর উদিত হয় নি। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এরপর ওয়ান-ইলেভেন পার করে ক্ষমতার মসনদে সেই যে বসেছে, টানা ১৫ বছর ক্ষমতাসীন রয়েছে।
কিছুদিন আগেও ওবায়দুল কাদের, লন্ডনে অবস্থানকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ক্ষমতার মসনদ অনেক দূরে চলে গিয়েছে।
আসছে ২৮ অক্টোবর, একযোগে সমাবেশ ডেকেছে সরকার বিরোধীরা। বিএনপি নয়া পল্টনে ডেকেছে মহাসমাবেশ, গণ অধিকার পরিষদ প্রেসক্লাব মোড়ে ডেকেছে বিক্ষোভ আর জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচি শাপলা চত্বরে। যদিও জামায়াত সমাবেশের অনুমতি পায় নি। এছাড়াও ক্ষমতাসীনদের শান্তি সমাবেশ হবে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে।
তবে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন এবং জটিলও বটে। সেবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ছিল, যা এবার নেই। সেবার আওয়ামী লীগের দাবি ছিল কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা না করা। এবার বিএনপির লক্ষ্য সরকার পতন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। সংবিধান সংশোধনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন কোন বৈধ প্রক্রিয়া নয়। আওয়ামী লীগ চায় সংবিধানের ভেতরে থেকে নির্বাচন আর বিএনপি চায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের ডাকা সমাবেশের দিনে পাল্টা জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএনপি। তারিখটা সেই ২৮ অক্টোবর কিন্তু সালটা ২০২৩ । এবার সরকার দলে আছে আওয়ামী লীগ। ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশের দিনে আওয়ামী লীগ ডাক দিয়েছে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের।
১৭ বছর আগের ২৮ অক্টোবরের আওয়ামী লীগ আন্দোলন সফল হয়েছিল লগি বৈঠা দিয়ে কিন্তু বিএনপি’র দিক থেকে এখনো অল আউট আন্দোলনের কোন তৎপরতা দেখা যায় নি। এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন সমাবেশ শেষ করে নেতা কর্মীরা রাজধানী ত্যাগ করবে।