যতক্ষণ গোলায় খাবার আছে ততক্ষণ রিজার্ভ নিয়ে ভাবি না: শেখ হাসিনা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৮, ২০২৩, ১০:৩০ পিএম

যতক্ষণ গোলায় খাবার আছে ততক্ষণ রিজার্ভ নিয়ে ভাবি না: শেখ হাসিনা

ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,যতক্ষণ গোলায় খাবার আছে ততক্ষণ রিজার্ভ নিয়ে ভাবি না।  আরও বলেন-

“বেশি কথা বললে সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব। নির্বাচনের পরে আসতে পারলে আবার করব। তার পরে দেখি কে সাহস পায় ক্ষমতা নিতে।”

দেশের মানুষকে অন্ধকারে না রেখে ‘ভালো রাখতে গিয়ে’ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চেয়েছেন রিজার্ভ ধরে রাখতে গিয়ে পণ্য আমদানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে আগের অবস্থায় নিয়ে যাবেন কি না।

তিনি বলেন, “দেশের মানুষকে এখন যদি বলেন অন্ধকারে রেখে রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে, তাহলে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেই? পানি দেওয়া বন্ধ করে দেই? সার বন্ধ করে দেই? তাহলে রিজার্ভ ভালো থাকবে।”

সব বন্ধ করে রিজার্ভ বাড়াতে হবে কি না সে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “আমার রিজার্ভটা বেশি রাখা প্রয়োজন না দেশের মানুষকে আরাম, ভালো মন্দ… মানুষের জন্য কাজ করা, কোনটা প্রয়োজন?”

ভারতে জি টোয়েন্টির শীর্ষ সম্মেলন এবং জাতিসংঘের ৭৮ তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে শুক্রবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবারই সাংবাদিকরা সমসাময়িক আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন, যার ব্যতিক্রম হয়নি এদিনও।

একজন গণমাধ্যমকর্মী সরকারপ্রধানের কাছে প্রশ্ন রাখেন বাংলাদেশের ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ নিয়ে। আওয়ামী লীগের এক যুগের শাসনামালে রিজার্ভের উত্তরোত্তর উন্নতি হলেও করোনাভাইরাস মহামারীর অবসান ও ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর ২০২২ সালের শুরুর দিক থেকে তা ক্রমেই কমছে।

নেট রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে, যা দেড় বছর আগেও ছিল ৪০ বিলিয়নের ওপরে। নেট রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাওয়ায় আইএমএফের প্রতিশ্রুত ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ও অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

রিজার্ভের পতন আর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী- এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বলেন রিজার্ভ কমার কারণ। তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের মহামারিতে আমাদের আমদানি বন্ধ ছিল, রপ্তানি বন্ধ ছিল, যোগাযোগ বন্ধ ছিল, যাতায়ত বন্ধ ছিল, সব কিছু বন্ধ ছিল। যার কারণে আমাদের রিজার্ভ বেড়েছিল। এর পর যখন অর্থনীতি খুলে গেলে আমাদের সমস্ত জিনিস আমদানি করা শুরু হল, স্বাভাবিকভাবে রিজার্ভ কমবে, এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার।”

দুইশ ডলারের গম ছয়শ ডলারে কিনতে হচ্ছে, আটশ ডলারের পরিবহন ব্যয় তিন থেকে চার হাজার ডলার লাগছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তার পরেও সেটা পাওয়াও যাচ্ছে না।”

২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করার সময় রিজার্ভ কত ছিল, সে প্রশ্ন রেখে তিনি সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “তার আগে তো অনেক আতেলরা ক্ষমতায় ছিল, জ্ঞানীগুণীরা ক্ষমতায় ছিল। রিজার্ভ কত ছিল?

“এক বিলিয়নও ছিল না, ০.৭৭ বিলিয়ন (৭৭ কোটি) ছিল। আমি যখন ১৯৯৬ এ ক্ষমতায় আসি তখন কত ছিল? আড়াই মিলিয়ন; বিলিয়নের ধারে কাছেও নাই। যেটুকু বেড়েছে আমাদের সরকারের আমলেই বেড়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সে জন্যই আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাই, এক টুকরো জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। আমরা নিজেরা উৎপাদন করব, নিজেরা খাব, মানুষ কিন্তু করছে।”

রিজার্ভ নিয়ে নানা জনের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রিজার্ভ নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারে, আমি তো বলছি যে ঠিক আছে, যখন সরকার গঠন করেছিলাম তখন রিজার্ভ যত ছিল, ওইখানে রেখে তারপরে আবার নির্বাচন করব। পড়ে আবার বাড়াব। কিন্তু ওই খানে নিয়ে এসে দেখাব যে এই ছিল।”

সেটি করলে কী হবে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বিদ্যুৎ শতভাগ থেকে কমিয়ে ২৮ ভাগে নিয়ে এসে দাঁড় করাব। সবাই একটু টের পাক যে কী ছিল।

“বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে বলেছিলাম যেন প্রতিদিন একটু করে লোডশেডিং দেয়। তাহলে মানুষের একটু মনে থাকবে যে লোডশেডিং আছে। প্রতিদিন তেল কিনে জেনারেটর চালাতে হবে তখন আবার আক্কেলটা ঠিক হবে, যে এই অবস্থায় ছিল।”

বিদ্যুতে ভর্তুকি কেন দেবেন, সে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে সবাই আর ভর্তুকির সুযোগটা নিচ্ছে সব অর্থশালী বড়লোকরা। সেখানে একটা স্লট ঠিক করব এত পর্যন্ত সাধারণ মানুষের এক দাম, আর তার থেকে বেশি তাদের জন্য আরেক দাম। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি স্লট করে করে দাম নির্ধারণ করতে। যে বেশি ব্যবহার করবে তাকে বেশি দামে কিনতে হবে।”

রিজার্ভের পতন, বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সমালোকদের বক্তব্যে তিনি বলেন, “বেশি কথা বললে সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব। নির্বাচনের পরে আসতে পারলে আবার করব। তারপরে দেখি কে সাহস পায় ক্ষমতা নিতে।”

“সব গোছাইয়া গাছাইয়া দেওয়ার পরে এখন নির্বাচনের কথা, ভোটের কথা পাকা পাকা কথা শুনতে হয়। আমি এত কথা শুনতে রাজি না। আমি এই দেশে আজকে না, ৭৭ বছর বয়স। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। তাহলে আমার রাজনীতির বয়স কত? বাবা মা ভাই বোন সব হারিয়েছি, আমার হারাবার কিছু নেই।

“আগে বাংলাদেশ শুনলে সবাই নাক সিটকাত, এখন বাংলাদেশ শুনলে আলাদা মর্যাদার দৃষ্টিতে তাকায়, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। এটা মাথায় রাখতে হবে, এটা বাতাসে হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে এটা করেছি। একটা স্বপ্ন পূরণ করা যেটা জাতির পিতার ছিল।”

Link copied!