গত ৬ জুন বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুরে সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানার ৩ নম্বর গেটের সামনে কারখানার ৩ জন কর্মকর্তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ ও জিম্মি করে ভুয়া র্যাব। এ সময় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও ট্রাক ভাড়ার ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে পালিয়ে যান তারা। এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি মামলা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১২ জুন) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর আভিযানিক দল রাজধানীর রামপুরা, উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভুয়া র্যাবের মূলহোতা হামিম ইসলাম, মো. জিন্নাহ মিয়া, মো. আমিন হোসেন, রুবেল ইসলাম ও মো. আশিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, “গত ৬ জুন গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে র্যাব পরিচয় দিয়ে একদল ছিনতাইকারী সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের তিনজন কর্মকর্তা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং পরবর্তীতে ব্যাংক থেকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধের জন্য উত্তোলনকৃত প্রায় ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে।”
তিনি আরও বলেন, “গ্রেপ্তারকৃত প্রত্যেকেই এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল বলে তারা আমাদেরকে জানায়। এই ঘটনার মূল হোতা ছিল হামিম ইসলাম। তার অন্যতম সহযোগী হচ্ছে রুবেল। এই রুবেল ঘটনার দিন ওই ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই ভিকটিমদের গতিবিধি অনুসরণ করছিল ও তারা তাদের অন্য একটি দলকে এই তথ্য দেয় যে ভিকটিমরা প্রাইভেটকারযোগে কারখানার দিকে যাচ্ছে।”
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাছে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, দুটি খেলনা পিস্তল, দুটি র্যাব জ্যাকেট, দুটি র্যাবের ক্যাপ, একটি হাতকড়া, অন্যান্য সরঞ্জামাদি ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এই ডাকাত চক্রের সদস্য আছে ১০-১২ জন। গ্রেপ্তারকৃত হামিম ডাকাত চক্রের প্রধান।
র্যাব জানায়, ডাকাত দল বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ভুয়া পরিচয়ে ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করে লেনদেন পর্যবেক্ষণ করতো। পরবর্তীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে বাইরে অবস্থানকৃত চক্রের অন্য সদস্যদেরকে বিষয়টি জানাতো। একই সময় বাইরে অবস্থান করতে থাকা চক্রের সদস্যরা তাদের ব্যবহৃত গাড়ি দিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তির গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে। পরে সুবিধাজনক নির্জন স্থানে টার্গেট ব্যক্তির গতিরোধ করে নিজেদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে ভিকটিমকে মারধর করে তার কাছে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নির্জন স্থানে তাকে ফেলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রতি মাসে দুই-তিনটি ডাকাতি করতো বলে ও ডাকাতির টাকা চক্রের সদস্যদের মধ্যে নিজেরা ভাগাভাগি করে নিত বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা গত ৩-৪ বছর ধরে নিজেদের র্যাব-পুলিশ-ডিবি-সাংবাদিক ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া ‘সদস্য’ হিসেবে পরিচয় দানসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত গাড়িতে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বাহিনীর লোগো সংবলিত স্টিকার ব্যবহার করতো।
র্যাবের মুখপাত্র আরাফাত ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তারকৃত ছিনতাইকারী দলের পাঁচজন সদস্য, এরা মূলত একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলে সদস্য। যারা দীর্ঘ দিন ধরে নিজেদেরকে ভুয়া র্যাব-পুলিশ-ডিবি সদস্য কিংবা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কিংবা অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নাম-পরিচয় ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বিভিন্ন ছিনতাই করে আসছিল।”