গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে আগুন: ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, ৪-৫-তলা ফ্লোর ভেঙে পড়েছে ৩-তলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগস্ট ২৯, ২০২৪, ০৮:৩৮ এএম

গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে আগুন: ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, ৪-৫-তলা ফ্লোর ভেঙে পড়েছে ৩-তলায়

গাজী টায়ার ফ্যাক্টরির ভবন পরিদর্শন করেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার ফ্যাক্টরির ভবনটি আগুনে পুড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ফায়ার সার্ভিসের বিশেষজ্ঞরা। ভবনটি পরিদর্শনের পর তারা জানান, তিনদিন ধরে আগুন জ্বলতে থাকায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেখানে উদ্ধার অভিযান করাটাও ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া ভবনটির ৪-৫-তলা ফ্লোর ভেঙে ৩-তলার মধ্যে এসে পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে রূপগঞ্জে গাজী টায়ার আগুনে পুড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি পরিদর্শন করেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের প্রফেসর রাকিব আহসান ও ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল হকসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা। ভবনটি পরিদর্শন শেষে তারা জানান, ভবনের ওপরের তিনটি ফ্লোরের ছাদের অংশ ভেঙে পড়েছে। সেজন্য উদ্ধার অভিযান করা ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে থাকায় ৪, ৫ ও ৬-তলার ছাদ ভেঙে গেছে। বাঁকা হয়ে গেছে ভবনের বিম। আগুনে পুড়ে ভবনের ছাদের রড বেরিয়ে গেছে। এ-অবস্থায় অভিযানে গেলে ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে। ভবনটিতে কোনও মরদেহ চোখে পড়েনি বলেও জানান তারা।

ব্রিফিংয়ে বুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগ প্রফেসর রাকিব আহসান বলেন, “গতকাল (বুধবার) রাতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আমাদের বিভাগের প্রধানের সঙ্গে ডিসি সাহেব কথা বলেন। ওই কথার প্রেক্ষিতে এই ভবনের কাঠামোগত অবস্থা দেখতে আমি আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে এখানে উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব কিনা- সেটা পরীক্ষা করে দেখতে এসেছি। আমরা ভবনের চারপাশ থেকে যতদূর সম্ভব দেখেছি। গতকাল ফায়ার সার্ভিস ড্রোন দিয়ে কিছু ছবি নিয়েছে সেগুলোও আমরা দেখেছি। সেগুলো পর্যালোচনা করে যেটি মনে হয়েছে, আগুনটা দীর্ঘ সময় ধরে ছিল, তিনদিনের মতো জ্বলেছে। এখানে অনেক ক্যামিক্যাল ছিল। যার ফলে এখানে তাপও অনেক বেশি তৈরি হয়েছে, স্ট্রাকচারটা দেখলেই এটা বোঝা যায়। এখানে কনক্রিটগুলো শুধু পুড়ে যায়নি, পুড়ে ভেঙে গেছে, রডগুলো বের হয়ে গেছে। এটা ৬-তলা ভবন। এখানকার ৪-৫-তলা ফ্লোর ভেঙে ৩-তলার মধ্যে এসে পড়েছে এবং সেই ভাঙা অংশগুলোর ওজন অনেক বেশি। ফলে তিনতলাও বেঁকে গেছে। কলামগুলো বেশির ভাগই ফেটে গেছে।”

গাজী টায়ার ফ্যাক্টরি
গাজী টায়ার ফ্যাক্টরির ভেতরে এখনও কোথাও কোথাও আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, “ওপর তলাগুলোতে বেশি সময় ধরে আগুন জ্বলার কারণে ওইদিকে ক্ষয়ক্ষতি বেশি এবং সেটিই সমস্যা। কারণ নিচের দিকে যদি উদ্ধার অভিযান পরিচালনার চেষ্টা করা হয়, তাহলে ওপরের দিকের অংশ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব বিবেচনায় ভেতরে উদ্ধার অভিযান করা খুবই বিপজ্জনক। এটা পরবর্তীতে ভেঙে ফেলার পরিকল্পনাটাও অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক করতে হবে, যাতে ভেঙে ফেলার সময়ও কোনও দুর্ঘটনার সৃষ্টি না হয়।”

মরদেহ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের সাদা চোখে এরকম কিছু চোখে পড়েনি। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত, তারা ভালো বলতে পারবেন।”

ঢাকা বিভাগের ফায়ার সার্ভিস সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক বলেন, “জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটা টিম গঠন করা হয়েছে, যেখানে জেলা প্রশাসকের লোকজন আছেন। আমরা টার্নটেবল র‍্যাডার দিয়ে ভবনের ছাদের ওপরের অংশ দেখেছি। ৫-৬-তলা সবগুলো অংশ দেখেছি। এ ছাড়া আমরা ড্রোনও ব্যবহার করেছি। আমাদের সদস্যরা ৪-তলায় সিঁড়ি দিয়েও উঠে দেখেছেন। এখনও পর্যন্ত আমরা যা দেখেছি, তাতে কোনও ভিকটিম চোখে পড়েনি। ওখানকার অবস্থা দেখে আমাদের মনে হয়েছে, ওখানে সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ (উদ্ধার) করাবো সেই সুযোগ নেই।”

Link copied!