আগস্ট ১৫, ২০২৩, ০৩:১০ এএম
মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা।
সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
হামলায় আরটিভির ক্যামেরাপারসন মানিক, যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টার শান্ত, ইনডিপেনডেন্টের রিপোর্টার ও ক্যামেরাপারসন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে পিজি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার ভোরে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সামনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সাঈদীর সমর্থকরা। অ্যাম্বুলেন্সে করে সাঈদীর মরদেহ দাফনের জন্য পিরোজপুরের উদ্দেশে রওনা করলে অ্যাম্বুলেন্সটিতে ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় জামায়াতের নেতাকর্মীরা শাহবাগ এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে তারা।
সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
সাঈদীর মৃত্যুর খবরটি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে নিশ্চিত করেন বিএসএমএমইউর ডিভিশনাল প্রধান (হার্ট ফেইলিওর) অধ্যাপক ড. চৌধুরী মেসকাত আহম্মেদ।
এর আগে রবিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে অসুস্থ অবস্থায় সাঈদীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিএসএসএমইউতে পাঠানো হয়।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১-এ বন্দী ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। সেখানে থাকা অবস্থায় রবিবার বিকেল পাঁচটার দিকে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন জামায়াতের এ নেতা। এরপরই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন।
ওই রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। প্রথম তিন দিনেই অন্তত ৭০ জন নিহত হন। এছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।
পরে সাঈদীর আপিলের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।