নভেম্বর ১১, ২০২৩, ০১:৪১ পিএম
কবি নজরুল শুধু বাঙালির কবি নন, তিনি সারা বিশ্বের কবি। দাদুর গানের সুর বদলে ফেলা হল, এ আর রহমানকে কে অনুমতি দিলো? এ আর রহমানের কি জানার দরকার ছিলো না দাদু বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আমরা পরিবারের সদস্যরা কবি কাজী নজরুল ইসলামকে তো এভাবে অপমানিত হতে দেবো না। আজ বাংলাদেশে, ভারতে শিল্পীরা প্রতিবাদ জাানচ্ছেন, এই প্রতিবাদ চলবে। কাজী নজরুল ইসলামের গান ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ এ আর রহমান বিকৃতভাবে সুরারোপ করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলামের বড় ছেলে কাজী সব্যসাচীর কন্যা মিষ্টি কাজী। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যেখানে কবি নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে অতিথি হিসেবে ছিলেন তিনি।
কাজী নজরুল সম্পর্কে এ আর রহমান জানেনা উল্লেখ করে মিষ্টি কাজী আরও বলেন, আমি এখন বাংলাদেশি নাগরিক। আমার দাদু কাজী নজরুলকে অপমানিত হতে দেব না। কে গান বিকৃত করেছে, সেটা জানা আমাদের মুখ্য নয়। বরং যে গানটি বিকৃত করেছেন; তার জানা দরকার ছিলো তিনি কার গানকে এরকম করে উপস্থাপন করছেন! কবি নজরুল সারা বিশ্বের খ্যাতিমান কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি।
ভারতের জিটিভির প্রযোজনায় এ আর রহমানের সংগীতায়োজনে ‘পিপ্পা’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উদ্দীপনা ও জাগরণীমূলক গান ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির সুর ‘বিকৃত’ করে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা। এর প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে ঢাকার ধানমণ্ডিতে নজরুল ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থা।
এদিন মিষ্টি কাজীর সঙ্গে নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও নজরুলসংগীত সংস্থার সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সংগীতশিল্পী শাহিন সামাদ, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলিন পরিষদের সহ সভাপতি বুলবুল ইসলাম, নজরুল সংগীতশিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ, লীনা তাপসী খান, ইয়াসমীন মুস্তারী, সুজিত মুস্তাফা, নজরুল গবেষক রাশেদুল ইসলাম ও মাহবুবুল হক উপস্থিত ছিলেন।
খায়রুল আনাম শাকিল লিখিত বক্তব্যে বলেন, এই গানটি অবিকৃত সুরে বিভিন্ন চলচ্চিত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে মুক্তি সংগ্রামী ও যোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। এই গানটির নজরুল সুরারোপিত আদি রেকর্ডটির প্রাপ্যতা সত্ত্বেও এর পরিবেশনা কেবল অন্যায় ও বেআইনি নয়, নজরুলের সৃষ্টির প্রতিও অবজ্ঞা প্রদর্শন। এটি নিতান্ত ঘৃণ্য ও হীন অপকর্ম, এক ধরণের বুদ্ধিবৃত্তিক অনাচার।
‘পিপ্পা’ প্রযোজক গানটি সিনেমায় ব্যবহার করতে নজরুলের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর অনুমতি নিয়েছিলেন, এমন প্রশ্নে মিষ্টি কাজী বলেন, আমি জানি না ব্যাপারটা, আদৌ উনি পারমিশন দিয়েছেন কি না! ২০২১ সালের অক্টোবরে আমার চাচী মারা গেছেন। কাজী অরিন্দম, কাজী অনির্বাণ, অনিন্দিতা ওরা আমেরিকায় আছে, কিন্তু আমি স্যরি আমি এই ব্যাপারটা জানি না। কল্যাণী কাজী কি পারমিশন দিয়েছেন কি না।
কাজী নজরুলের গানের সুরের বিকৃতি প্রসঙ্গে মিষ্টি কাজী জানান, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের পারিবারিক প্রোপার্টি নয় পুরো বিশ্বের প্রোপার্টি। তার গানকে বিকৃত করার অধিকার কারো নেই। গানের যে বিকৃতি ঘটছে তা নিয়ে এখানে তিনি নিন্দা, এবং প্রতিবাদ জানাতে আসছেন । তিনি বলেন কাজী নজরুল, রবীন্দ্রনাথ এরা আলাদা কেউ নয় সবাই বাংলার মুখপাত্র। আমার একটাই আক্ষেপ এ আর রহমানের কাছে তিনি যখন গানটা করলেন, সঠিক সুরে কেন করলেন না ! উনি তো ফিল্ম মিউজিশিয়ান ওনার তো জানা উচিত গানের ব্যাপারে। আমাদের পরিবারের কেউ যদি গান করার ব্যাপারে অনুমতি দিয়ে থাকেন তাহলে ওনার জানা উচিত ছিলো এটা বিদ্রোহের গান ।
কবি নজরুলের গান বিকৃত করার অধিকার কারো নেই বলে জানান তার নাতনি মিষ্টি কাজী।
এ আর রহমানের গান বিকৃত করার বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে মিষ্টি কাজী বলেন পশ্চিমবঙ্গের নজরুল সংগঠন থেকে হাইকোর্টে এ আর রহমানের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে । বাংলাদেশ থেকে কোনো নোটিশ যাবে কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন এটা অবশ্যই করা উচিত এবং ইনষ্টিটিউট থেকে এ ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে । তবে একটা কথাই থাকবে আজকে কাজী নজরুলের গান বিকৃত করে কেউ যদি পার পেয়ে যায় তবে আরো যারা আছেন তাদের অস্তিত্ব ও কিন্তু বিলীনের মুখে যাবে । তাই এখন থেকেই প্রতিবাদ হওয়া উচিত।
সঙ্গীত শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী জানান , সবার সঙ্গে কথা মিলিয়ে আমি বলতে চাই গানটার সুর আসলেই বিকৃত হয়েছে । আমি ছোটবেলা থেকেই গান শিখি। আমার বাবা (কবি তালিম হোসেন,নজরুল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ) বলতেন নজরুলের গান গাইছো কাঠামো ঠিক রেখে গান গাও । এ আর রহমান যেভাবে এই গান করেছেন এর জন্য শাস্তি দেওয়া উচিত। তিনি যে কাজটি করেছেন তা আমরা আশা করিনি ।
এ আর রহমান যেভাবে এই গান করেছেন এর জন্য শাস্তি দেওয়া উচিত বলে জানান সঙ্গীত শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী।
এদিকে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ ইতিমধ্যে এ আর রহমানের গানের জন্য প্রতিবাদ আরম্ভ করেছে । বাংলা একাডেমির মতে, ১৯৫০ সালের রেকর্ডের যে স্বরলিপি আছে তা দিয়েই প্রতিবাদ করা হবে। আপাতত কোন আইনি পদ্ধতিতে যাওয়া হচ্ছে না। আদি যে গান রেকর্ড করা হয়েছে ওভাবেই গাইতে হবে এটাই তাদের বক্তব্য।
নজরুল ভক্ত রওশন আরা সোমা বলেন, আজকে নজরুলের গান নিয়ে যা করা হয়েছে আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। প্রতিবাদ লিপি নিয়ে আমরা তো রাস্তায় যেতে পারবো না। আমাদের একটা রুট ধরে সাংস্কৃতিক মন্ত্রালয়ে আমরা যাবো । এরপর তাদের থেকে ফরেন মিনিস্ট্রিতে নোটিশ যাবে।