পৃথিবীর মানুষ বর্তমানে ঠিক কতটি ভাষায় কথা বলে? জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো বলছে, সাত হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভাষা এই শতাব্দী শেষ হতে হতে চিরতরে হারিয়ে যাবে।
অবশ্য পৃথিবী থেকে ভাষা বিলুপ্তি নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগেও বহু ভাষা বিলুপ্ত হয়েছে। অনেক ভাষা হয়তো আমাদের জানার আগেই হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশের কিছু ভাষাও হারিয়ে যেতে বসেছে। যেকোনো সময় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এগুলো। এমন কয়েকটি ভাষা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য জেনে নিই।
ইউনেসকো বলছে, ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কত ভাষা, তার সঠিক হিসাব তাদের জানা নেই। ভাষাবিদেরা বিভিন্ন অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ভাষা গণনা করেছেন। তাঁদের মতে, ইউরোপ ও এশিয়া অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অন্তত ৭৫টি ভাষা। যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চল থেকে গত ৫০০ বছরে কমপক্ষে ১১৫টি ভাষা হারিয়ে গেছে। অথচ কলম্বাসের সময়ে ওই অঞ্চলে ভাষা ছিল ১৮০টি।
নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজের এক প্রতিবেদনে আফ্রিকা অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সুদানের ৬৫টি, ক্যামেরুনের ৩৬টি, নাইজেরিয়ার ২৯টি, চাদের ২৯টি, ইথিওপিয়ার ২৮টি, সেনেগালের ১৫টি, কেনিয়ার ১৩টি, তানজানিয়ার ১২টি ও দক্ষিণ আফ্রিকার ১০টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে।
সম্প্রতি বিলুপ্ত হয়েছে এমন কিছু ভাষার তালিকা দিয়েছে ইউনেসকো। সেই তালিকায় রয়েছে ‘আক্কালা সামি’, ‘আসেক্স’, ‘উবাই’ ও ’ইয়াক’।
ভাষাবিজ্ঞানীরা বলছেন, এশিয়া অঞ্চলে অন্তত ৮টি ভাষা বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এই ভাষাগুলো হচ্ছে সারিকলি, সেজ, আইনু, নাইকান উপিক, হিজল, সোয়াচ, কুসুন্দা ও মেডনেস আলেয়ুত।
শুধু বিদেশি ভাষাই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে এমন নয়। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশের কিছু ভাষাও। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রচলিত ১৪টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাষাগুলো হচ্ছে কুন্দ, খারিয়া, কোদা, সৌরা, মুন্দারি, কোল, মাল্টো, খুমি, পাংখুয়া, রেঙ্গমিচা, চাক, খায়াং, লুসি ও লালেং। এসব ভাষাভাষী মানুষেরা প্রধানত দেশের উত্তরাঞ্চলে, সিলেট অঞ্চলে এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে। তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে ৪১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে, যারা নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। তারা জনসংখ্যার দিক থেকে খুব বেশি নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংখ্যা হাজারের ঘর পার হবে না।
হারিয়ে যাওয়া এবং হারাতে বসা এসব ভাষার পরিণতিই বলে দিচ্ছে, ভাষারও যত্ন নিতে হয়। তা না হলে ভাষার ভেসে যাওয়া ঠেকানো সম্ভব না বলে মনে করেন ভাষাবিদরা।