বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত অবধি টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে ময়মনসিংহ নগরীর বেশিরভাগ রাস্তাঘাট। হাঁটু থেকে কোমড় পানির মধ্যে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নগরীর ব্রাহ্মপল্লী এলাকার বাসায় হাঁটু পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন মো. পলি (৬৫) নামে একজন বয়স্ক নারী।
টানা বৃষ্টিতে নগরীর গাঙ্গিনারপাড়, ধোপাখোলা, চরপাড়া, নতুন বাজার, স্টেশন রোড, নয়াপাড়া, ব্রাহ্মপল্লী, কালীবাড়ি, গুলকিবাড়ি, আমলাপাড়া, ভাটিকাশরসহ নগরীর অনেক এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে।
এসব এলাকার বাসাবাড়ি দোকানপাট, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যায়। অনেককে পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। শুক্রবার সকালের মধ্যে বেশকিছু এলাকার পানি নেমে গেলেও সানকিপাড়া, গুলকিবাড়ী, কপিক্ষেত, আকুয়া, ভাটিকাশরসহ বেশ কিছু এলাকায় বিকাল পর্যন্ত পানি জমে থাকতে দেখা যায়।
সানকিপাড়া এলাকার আসাদ জামান বলেন, “আমার ৪০ বছরে এমন বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা কখনও দেখিনি। এলাকার প্রত্যেকটা বাসায় পানি উঠে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কমপক্ষে ১৫ দিন আমাদের এর রেশ টানতে হবে। বৃষ্টি না হলে দুইদিনের মধ্যে পানি সরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
অটোরিকশার চালক হামিদ মিয়া বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে দুইদিন ধরে কোনো আয় নেই। পানির মধ্যে পেটের ক্ষুধা নিয়ে বের হয়ে বিপাকে পড়েছি। মনে হচ্ছে, রিকশার ব্যাটারি একটি নষ্ট হয়ে গেছে।”
সদর উপজেলার চরহরিপুর এলাকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, “১০ শতাংশের পুকুর ডুবে সব মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার রাতে রেলপথ পানিতে তলিয়ে যায়। সিগন্যাল পয়েন্ট কাজ না করার কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছিল।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, “হাসপাতাল চত্বরের কিছু এলাকা নিচু হওয়ায় পানি ঢুকে পড়েছে। গত রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালু রাখা ছিল। তবে, সকাল থেকে বিকল্প বিদ্যুৎ লাইনে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা চালু রয়েছে।”
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু গণমাধ্যমকে বলেন, “এত বৃষ্টি আমার জীবনেও দেখিনি। খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন সঠিকভাবে না হওয়ায় নগরীতে জলাবদ্ধতা বেশি হয়েছে। যেসব এলাকায় এখনও পানি জমে আছে সেসব এলাকার ভোগান্তি নিরসন করতে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। সিটি করপোরেশনের চলমান ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ সম্পন্ন হলে মানুষ জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।”
অক্টোবর মাসে গত পাঁচ দশকে একদিনে অন্তত আটবার ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ঘটনা । এর মধ্যে ময়মনসিংহে দুইবার; দিনাজপুর, ফেনী, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, নোয়াখালীর হাতিয়া ও খেপুপাড়া স্টেশনে এমন বৃষ্টি দেখা গেছে।