জানুয়ারি ১৪, ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ যুক্ত চিত্রকর্ম বাতিলের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতিবাদ জানানো হলো চিত্রকর্মের মাধ্যমেই।
মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও রোকেয়া হল সংলগ্ন বিভিন্ন দেওয়াল ও রাস্তায় এসব চিত্রকর্ম আঁকা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “সারা বাংলাদেশে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি যেভাবে দখলদারিত্বের কবলে চলে যাচ্ছে- তা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের যাতে সচেতনতা সৃষ্টি না হয় বরং আদিবাসী জনগোষ্ঠী সম্পর্কে যাতে সাধারণ জনগণ ভুল এবং বিকৃত তথ্য জানতে পারে, এই ধরনের মিথ্যা প্রচার-প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’।
“মূলত আদিবাসী শব্দের মূল অর্থ এবং আদিবাসী শব্দের সঠিক ইতিহাস না জেনে, আদিবাসী শব্দটিকে এই উগ্র জনগোষ্ঠী অন্য খাতে প্রবাহিত করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে আদিবাসী শব্দটি নিয়ে একটি বিভ্রান্তি এবং ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে।”
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’।
পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিদের সংগঠনগুলোর সদস্যরা ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা বলেন, “পাঠ্যপুস্তকের পেছনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি গ্রাফিতির ছবি, যেখানে আদিবাসী শব্দটি আছে- সেটি বাদ দেয়ার জন্যে এই উগ্র গোষ্ঠী যে উগ্রতা দেখাল তার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছি।
“বাংলাদেশ কোনো একক জনগোষ্ঠীর, একক ধর্মের এবং একক জাতির দেশ না। আদিবাসী শব্দটি বাতিলের মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই উগ্র সাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠী। কিন্তু আমরা আমাদের জাতিগত অস্তিত্বের বিষয়ে কোনোভাবে আপস করব না।”
প্রতিবাদকারীদের একজন শান্তিময় চাকমা বলেন, “কিছুদিন আগে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামে যে উগ্ৰ সাম্প্রদায়িক সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিটিবি তার পাঠ্যবই থেকে আদিবাসী শব্দটি বাদ দিয়েছে, তারই প্রতিবাদে আমাদের এই গ্ৰাফিতি অংকন।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের ক্ষেত্রে জন্য যে আন্দোলন, সেখানে এই আদিবাসী গ্রাফিতি ব্যবহার করা হয়েছে এবং একইসাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে আদিবাসী বলে সম্বোধন করেছেন।
“কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের এই পাঁচ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামক উগ্ৰ সংগঠনের যে দাবি তা কি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে উদ্দেশ্যে, তার সাথে সাংঘর্ষিক না? তাদের এই ভিত্তিহীন দাবিটি কি প্রধান উপদেষ্টার আদিবাসী সম্বোধনকে অপমানিত করছে না?”
পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে আদিবাসীদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার দাবি জানিয়ে শান্তিময় চাকমা বলেন, “আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করা হবে। এবং সেখানে আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
আরেক প্রতিবাদকারী লিটন ত্রিপুরা বলেন, “আজকে এই রাতের গ্রাফিতির মাধ্যমে আমরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে বারবার সংঘটিত রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের নকশাকে ভেঙে দিয়ে ইনক্লুসিভ জনকল্যাণমুখী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবি করছি।
“অধিকন্তু বিয়োজন করা আদিবাসী শব্দটি পুনরায় সংযোজন করে দেশটি সকল মানুষের, সকল জনগোষ্ঠীর, সকল ধর্ম-বর্ণের জন্য বলে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে প্রমাণ করাটা আসলেই আমাদের একমাত্র দাবি।”