জুলাই ১৪, ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই আন্দোলনে সামনে থাকা নারীরা পরবর্তী সময়ে কেন মুখ লুকিয়ে ফেললেন, তা বোঝার দরকার আছে বলে উল্লেখ করেছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক নারী ঘর বন্ধ করে বসে আছেন। তারা হতাশাগ্রস্ত। তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
জুলাই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা স্মরণ করে আজ ১৪ জুলাই ‘জুলাই উইমেন্স ডে’ উদ্যাপন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে দুপুরে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ। শুরুতেই এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের কারণ তুলে ধরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মূল অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে আজ। খবর প্রথম আলো।
গত বছর আজকের এই দিনে দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মেয়েরা বের হয়ে আসেন। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। মেয়েদের অবদান স্মরণ করতে দিনটি নানাভাবে উদ্যাপন করছে সরকার। সংস্কৃতি উপদেষ্টা জানান, এ উপলক্ষে আজ সন্ধ্যা ছয়টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। এরপর ছয়টি ডকুমেন্টারি দেখানো হবে।
এ অনুষ্ঠান রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে জানিয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, গত বছর এই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা যেভাবে হল থেকে বেরিয়ে আসছিলেন, আজ রাতেও মেয়েরা সেভাবে হল থেকে বের হয়ে আসবেন। জাতীয় শহীদ মিনার থেকে তা সরাসরি দেখানো হবে।
আজ থেকে ৬৪ জেলায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু হচ্ছে জানিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, এ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনে পাঁচজন উপদেষ্টা সেখানে গেছেন। স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ আগামী ৪ আগস্ট শেষ হবে।
এ সময় মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ছেলেরা যখন আক্রান্ত হচ্ছিলেন, মেয়েরা এগিয়ে এসে তাঁদের রক্ষা করেছেন। জুলাই আন্দোলনটা ভাবনা তৈরি করেছে, কীভাবে সম্মিলিত শক্তি বিকাশ ঘটাতে পারে, সমাজ পরিবর্তন করতে পারে। এ শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রত্যেক নারী যোদ্ধাকে খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, নারীরা ‘সাইবার বুলিং’–এর শিকার হচ্ছেন। প্রথমে তাঁদের খুঁজে বের করে কাউন্সেলিং করা হবে। পরবর্তী সময়ে তাঁদের কীর্তি সংরক্ষণ করা হবে।
মুখ লুকিয়ে ফেলা নারী যোদ্ধাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিতে এত সময় লাগল কেন, এক সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে শারমীন মুরশিদ বলেন, ‘এ বিষয়গুলো আমাদের গোচরে আসতে সময় লেগেছে। আমরা তাদের কাছে যথাযথ সময় পৌঁছাতে পারিনি। তবে দেরিতে হলেও ১০০ জন নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জুলাই আন্দোলনের সময় সম্পৃক্ত নারীদের খুঁজে বের করতে।’
এ বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে শারমীন মুরশিদ বলেন, ‘অনেক মেয়ে জানিয়েছে, তারা সামনে আসতে রাজি নয়। কেন এমন হলো, এটা খুঁজে বের করতে হবে। তাদের কাউন্সেলিং করতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। কিছুদিন আগেও যে নারীরা রাজপথে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করল, এখন তারা কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, এই চিত্র ভালো বার্তা দেয় না।’
এ প্রসঙ্গে শারমীন মুরশিদ আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরও নারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এবার যাতে নারীরা মুখ ফিরিয়ে না নেয়, সে চেষ্টা চলছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শারমীন মুরশিদ বলেন, ‘সবকিছু ম্যাজিকের মতো হয় না। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি সাইবার টিম করছে। তারা ২৪ ঘণ্টা সাইবার বুলিং নজরদারি করবে। দেশে বসে অনেকে সাইবার বুলিং করছে, আবার বিদেশে বসে অনেকে এ ঘৃণ্য কাজ করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। পরে গণভবনের চারপাশ ও জাদুঘর নির্মাণের বিষয়টি সাংবাদিকদের দেখানো হয়।