রাজধানীর মৌচাক মোড়ের ব্যস্ত সড়কে বিশাল দুটি সমাধি। যার একটি শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তছলিমের অন্যটি মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ ফারুক ইকবালের। ঢাকা সিটি করপোরেশনের করা নামফলকে তাদের পরিচয় লেখা থাকলেও সমাধির চারপাশে পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা আর প্রসাবের গন্ধে অনেকেই খেয়াল করতে ভুলে যান অবহেলায় পড়ে থাকা প্রথম শহীদের সমাধি সৌধ।
উত্তাল মার্চের ৩ তারিখ রামপুরায় (বর্তমান টিভি ভবনের ১ নং গেট) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা যান ফারুক। মৃত্যুর দিন ছিল দুপুর দেড়টার দিকে একদল ছাত্র রামপুরা টিভি (বাংলাদেশ টেলিভিশন) ভবনের কাছে মিছিল নিয়ে আসতেই বাধার মুখে পড়েন। সামনে থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়া ফারুককে ডেকে নিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা। মিনিট দুয়েকের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সহযোদ্ধাদের কাছে ফিরে আসছিলেন ফারুক। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পেছন থেকে বুলেট ছুড়েন। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন ফারুক। পরে শহীদ ফারুকের শেষ ইচ্ছেতেই তাকে কবর দেওয়া হল ওই আন্দোলনের পথেই।
একই জায়গায় আরেকটি কবর কিশোর মুক্তিযোদ্ধা তসলিমের। তিনি ১৭ ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষে ঘরে ফেরার পথে নিহত হোন। এলাকাবাসীর দাবিতে ফারুক ইকবালের পাশেই সমাহিত করা হয় কিশোর মুক্তিযোদ্ধা তসলিমকে। ২০০৮ সালে তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয় এই সমাধিসৌধ। নাম দেওয়া হয় ফারুক-তছলিম স্মৃতি চত্বর। তবে জায়গাটি এখন দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই এটি প্রথম শহিদের সমাধিসৌধ। চারদিকে ময়লা আবর্জনা আর রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি চোখে পড়ার মতো।
ফারুক-তছলিমের সমাধিস্থলের পাশেই বসেছে পুলিশ বক্স। যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা হয়েছে ‘মৌচাক চত্বর পুলিশ বক্স, ডিএমপি, ঢাকা। যান্ত্রিক শহরের নাগরিকরা জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যেন ভুলেই গেছে। চারিদিক থেকে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে চেপে ধরা হয়েছে ফারুক-তছলিমের সমাধিস্থল। গড়ে তোলা হয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এমকি সমাধিস্থলেই পায়খানা-প্রসাব করতেও দ্বিধাবোধ করছে না অনেকে।
তবে ফ্লাইওভারের নিচে হেঁটে যাওয়ার সময় অবহেলায় পড়ে থাকা এই শহীদের কবর দেখে তামিম হাসান নামের এক শিক্ষার্থী জানান, চারপাশটা এত ময়লা থাকায় এখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদকে কবর দেওয়া হয়েছে তা বোঝার উপায় নেই। তবে জায়গা আরেকটু পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে পাশাপাশি বড় কোনো ব্যানার বা ভাস্কার্য থাকলে আমরা আরও বেশি জানতে পারতাম।
ঢাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ঢাদসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, ‘রাজধানীতে যত স্মৃতিস্তম্ভ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সেগুলো তালিকার কাজ চলমান। তালিকা হলেই সেগুলো সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে।’