অক্টোবর ২, ২০২৩, ০৯:১৯ পিএম
গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি আইনি ও রাজনৈতিক বেড়াজালে আটকা পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও আইনি ব্যাখ্যা প্রদান।
সরকার বলছে, তাদের আর করার কিছু নেই। বিদেশে যেতে হলে খালেদা জিয়াকে যেতে হবে আদালতে। এমনকি আবার কারাগারেও যেতে হবে। অন্যদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন সর্ত মেনে যেতে চায় না বিদেশে।
বিএনপি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, আইনগতভাবে বিদেশে যেতে তাঁর কোনো সমস্যা নেই। আদালতে আবেদনেরও কোনো প্রয়োজন নেই। নির্বাহী আদেশেই তাঁকে বিদেশে পাঠানো সম্ভব। বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে দেখার অনুরোধ করেন তারা। আবার আইনজ্ঞরা বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী শর্ত পরিবর্তনে আইনগত কোনো বাধা নেই। এ পরিস্থিতিতে আজ রোববার বিষয়টি নিয়ে আইনি মতামত দেন আইন মন্ত্রণালয় । আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন বিদেশ যেতে হলে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে গিয়ে আবার আদালতে আবেদন করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারিভাবে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার জন্য যতটুকু করা সম্ভব তা তিনি করেছেন। এখন বিদেশে যেতে হলে তাঁকে আদালতে ও কারাগারে যেতে হবে। গতকাল শনিবার প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা আরও বলেন, সরকারের ক্ষমতা অনুযায়ী তাঁকে বাসায় থেকে দেশের সবচেয়ে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘শুধমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করছেন। ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে শেখ হাসিনার কিছু কথা বলেছেন। তিনি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করে্ছেন।”
‘‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো দূর্ণীতির মামলা নেই। যে টাকা তারা বলে ২ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা সেই টাকা এখন ৮ কোটির ওপরে চলে গেছে… ব্যাংকে জমা আছে। শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়া যাতে রাজনীতি করতে না পারেন তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে।’’
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সংকটজনক অবস্থার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই সরকার তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রেখে তাকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা, ৪৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সরকার একটা ভয়াবহ দানবের সরকার, লুটেরা সরকার, বর্গীদের মতো সরকার। এরা সম্পদ বিদেশে পাচার করে বাড়ি-ঘর বানাচ্ছে। আর আমার দেশে মানুষ অসহায় ও অভুক্ত থাকছে।’’
‘‘তারা এরকম একটা ভয়াবহ রাষ্ট্র তৈরি করেছে। এটাকে রাষ্ট্র বলা যায় না, এদেশ আওয়ামী লীগের নির্যাতনকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এই রাষ্ট্র পরিবর্তন করতে হবে, এর কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একদফার আন্দোলন করছি … গণতন্ত্রহরণকারী, মানুষ হত্যাকারী এই শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং জনগনের হাতে ক্ষমতা তু্লে দিতে হবে।”
শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ এই শ্রমিক শ্রেনীই অতীতে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। আমি বিশ্বাস করি এবারো শ্রমিকরা অগ্রনী ভুমিকা পালন করবে।’’ইনশাল্লাহ আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।এই সরকারকে পদত্যাগ করতে সক্ষম হবো, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সক্ষম হবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে তাঁর ভাই একটি আবেদন করেছেন। কিন্তু এখানে আইনি জটিলতা রয়েছে। আমরা আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এর পর কিছু করতে হলে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থায় যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া কয়েকটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, তিনি কারাগারে ছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দণ্ডাদেশ স্থগিত করে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যাতে তিনি উন্নত চিকিৎসা পান, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক গণমাধ্যমকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী শর্ত পরিবর্তনে আইনগত কোনো বাধা নেই। সরকার বেশ কয়েকবার তাঁর কারামুক্তির মেয়াদ বর্ধিত করেছে। অর্থাৎ শর্ত পরিবর্তন করেছে। অতএব বিদেশে চিকিৎসার জন্য নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া ঢাকায় থাকবেন এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন– এই বাক্যে ঢাকা শব্দটা বাদ দিয়ে নতুন আদেশ জারি করতে আইনগত কোনো বাধা দেখি না।’
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু নতুন করে আবেদন করার কথা বলে সরকার সময়ক্ষেপণ করে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে আদালতের আদেশের প্রয়োজন নেই। সরকার নির্বাহী আদেশে তাঁকে অস্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়েছেন। নির্বাহী আদেশে তাঁকে বিদেশ পাঠাতে পারেন।’