ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২, ১০:১৮ এএম
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের পর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে সচেতন হয়ে উঠেছেন ভবন মালিক, বিভিন্ন কারখানা ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। মালিকরা স্বউদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম রাখছে ভবনগুলোতে। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানি নির্ভর অতি গুরুত্বপূর্ণ এই পণ্যটির। দাম বাড়ার কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অনেকেই এসব পণ্য নতুন করে কিনতে উদাসীনতা দেখাচ্ছে। যার ফলে অগ্নিনির্বাপনের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
সকল সরঞ্জামের দাম বেড়েছে
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে যেসব নতুন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বিক্রি হয়, তার একটা বড় অংশ আমদানি করা হয়। বেশিরভাগ আসে চীন থেকে। অগ্নিনির্বাপণে সর্বত্র ব্যবহৃত হয় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বা ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর বা হিট ডিটেক্টর। এই উপকরণগুলো আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।
বর্তমানে বাজারে একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার যন্ত্রের সর্বনিম্ন দাম ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা যা তিন-চার মাস আগেও ছিল ৭শ টাকা। এছাড়াও বর্তমানে বাজারে হোসপাইপ (১০০ ফুট) বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত, গংবেল (৫ কেজি) বিক্রি হয় ৭ থেকে ৮শ টাকায়, ফায়ার সাইরেন ৬শ টাকা, ফায়ার বাকেট ২শ টাকা, ফায়ার হুক ২শ ২০ টাকা এবং গামবুট ৫ থেকে ৬শ টাকা।
কর কমানোর দাবি
ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবহন খরচ বৃদ্ধিতে দেশের বাজারেও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।করোনার আগে যেখানে কার্গো খরচ ছিল ১৫শ মার্কিন ডলার তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫শ মার্কিন ডলারে। এছাড়া উচ্চকর দিয়ে পণ্যগুলো আমদানি করতে হচ্ছে।
অগ্নি নিরাপত্তা, দুর্যোগ ও বিষ্ফোরণ সম্পর্কিত এফবিসিসিআই স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. নিয়াজ আলী চিশতি বলেন, “দেশে নিরাপদ শিল্পায়ন নিশ্চিত করতে সব খাতের কারখানায় আগুন প্রতিরোধী ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় এসব সরঞ্জাম আমদানিতে পোশাক শিল্প বাদে অন্যান্য শিল্পোদ্যোক্তাদের উচ্চ করভার বহন করতে হচ্ছে।”
তিনি জানান, ফায়ার ডোর, ফায়ার অ্যালার্ম ক্যাবল ও হোস রিল আমদানিতে ৫৮.৬%, গেট ভাল্বে ৩৭%, ফায়ার পাম্প ও ফায়ার অ্যালার্ম সিস্টেম (ডিটেক্টর)এ ২৬.২%, ফায়ার এক্সটিংগুইশার ১১.০৫% ও এবিসি ড্রাই পাউডারে ৩১% করভার বহন করতে হচ্ছে।
উচ্চ করভারের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পক্ষে অনেক সময় পর্যাপ্ত অগ্নি প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তৈরি পোশাক শিল্পের মতো সবখাতে সমান সুবিধা দেয়ার দাবি জানান তিনি।
এছাড়াও কার্বন ডাই অক্সাইড, ফোম, ড্রাই পাউডারসহ অন্যান্য আগুন প্রতিরোধী গ্যাস ও রাসায়নিক আমদানিতে আলাদা অনুমতির দরকার হয়। যে কারণে এসব পণ্য আমদানিকারকদের অযথা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
দাম বৃদ্ধিতে অনীহা ক্রেতাদের
ওয়ারী এলাকার বাসিন্দা এমদাদ হক বলেন, “মানুষ কখন কোথায় যে বিপদে পড়ে তা বলা যায় না। তাই বাড়ি ও দোকানে আমি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখি। প্রতিবছর তা রিফিল করাই। তবে বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের মত সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে অনীহা কাজ করছে।”
রাজধানীর নবাবপুরের অলেম্পিয়া ফায়ার সলিউশন নামে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. মিরান হোসেনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসা মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর ফলে বাজারে দাম বৃদ্ধি-হ্রাসের উপরে আন্তর্জাতিক বাজারের বড় একটি প্রভাব থাকে। যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহামারী করোনা ভাইরাস। বিপদে বা সরকারি চাপে না পড়লে মানুষ সহজে এই পণ্য ক্রয় করতে আসেন না। তবে অনেক সচেতন মানুষ রয়েছেন যারা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করেন অতি গুরুত্ব সহকারে। সম্প্রতি দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের মধ্যেও একধরণের অনীহা দেখা যাচ্ছে।