আনভীরের মামলার পুনঃতদন্তের দাবিতে ৫১ নাগরিকের বিবৃতি, প্রকাশ করেনি বেশ কিছু গণমাধ্যম

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৬, ২০২১, ০৬:৫৪ পিএম

আনভীরের মামলার পুনঃতদন্তের দাবিতে ৫১ নাগরিকের বিবৃতি, প্রকাশ করেনি বেশ কিছু গণমাধ্যম

মুনিয়া আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সুবহান আনভীরের অব্যাহতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মামলার পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন ৫১ বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি ক্ষোভের সাথে দ্য রিপোর্টকে জানান, আমরা মনে করি তদন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়নি সে জন্যে পুনরায় তদন্তের দাবি জানিয়েছি। মুনিয়া হত্যা মামলা থেকে বসুন্ধারার ঐ ভদ্রলোককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সে জন্যে আমাদের মনে হয়েছে মামলার তদন্ত সঠিকভাবে হয়নি। 

দেশের আইনের শাসন উপেক্ষা করে এই তদন্ত  প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রবীন এই শিক্ষাবিদ জানান, পুলিশের সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা দেশের বিচার ব্যবস্থা, ন্যায় বিচার, জবাদিহিতার জন্যে অতি জরুরি৷ এইরকম অপরাধ করে পার পেয়ে গেলে, বিচারহীনতার সংস্কৃতির তৈরি হয়। এই যে আমাদের বিবৃতিও অনেক পত্রিকাতে ছাপানো হয়নি তার কি কারণ থাকতে পারে তিনি প্রশ্ন রাখেন।  

গত ১৯ জুলাই আদালতে আলোচিত মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে গুলশান থানার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান। তদন্ত প্রতিবেদনে মুনিয়ার বোনের করা  মামলার অভিযোগ থেকে আনভীরকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে গুলশান থানা পুলিশ। এই মামলার তদন্ত সঠিকভাবে হয়নি উল্লেখ করে গতকাল ২৫ জুলাই দেশের ৫১ প্রথিতযশা শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীরা  পুনঃতদন্তের দাবিতে বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে বলা হয়, 'মামলার পর পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতারতো দূরে থাক এমনকি থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। বিপরীতে বিচার চেয়ে আয়োজিত একটি নাগরিক সমাবেশে বাঁধা দেওয়া,মামলার পর আনভীরের অবাধ চলাচল,মুনিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য কুৎসা ও অবিরাম অপপ্রচার চালানো, মামলার বাদীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক ঘটনা তদন্তকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্য করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।'

এই মামলায় সুষ্ঠু তদন্তের জন্যে সরকাররের কাছে মুনিয়ার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা এই মামলার সুষ্ঠুভাবে পুনঃতদন্ত করার জন্যে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি এবং পুলিশের কাছে থাকা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামতগুলোর (নিহতের ডায়রি ইত্যাদি)যেন যথাযথ ও ন্যায়নুগ বিশ্লেষণ হয় তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। মামলার বাদীকে কোন চাপের মুখে পদ্মা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করেছে কিনা সরকারকে তাও খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করছি।' 

বিবৃতিদাতাদের মাঝে উল্লেখ যোগ্য কয়েকজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরি, গণস্বাস্থ্যে কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মানুষের জন্যে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম,মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, অর্থনীতিবিদ ড.হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচীব আলী ইমাম মজুমদার এবং অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ। 

এই মামলার পুনঃতদন্ত সম্পর্কে বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গুলশান থানার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান দ্য রিপোর্টকে জানান, এইটা এখন আদালতের বিষয়, আমরা প্রতিবেদন দিয়েছি। আদালত যদি মনে করে তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি তবে আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে। এই বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে পারবো না।

জানতে চাইলে মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া কথা বলতে না চেয়ে তার স্বামী মিজানুর রহমানের সাথে কথা বলতে বলেন। মুনিয়ার বোন জামাই মিজানুর রহমান দ্য রিপোর্টকে জানান, সবই তো জানেন ভাই, আর কি বলবো? কি হবে বইলা এই দেশে। পুনঃতদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তদন্ত চাই। সুষ্ঠু তদন্ত চাই। মুনিয়া হত্যা মামলার মিউচুয়াল সমাধান না করায় পদ্মা ব্যাংক থেকে চাকরি চলে গেছে আমার ওইয়াফের। এইটারও বিচার চাই। 

গত ১৯ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ২১ বছর বয়সী মোশারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধার হওয়ার পরেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে বসুন্ধারা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।

মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধার করে পুলিশ, যার মধ্যে ছয়টি ডায়েরি ছিল। সিসিটিভির ভিডিও পরীক্ষা করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার কথাও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়।

Link copied!