ঋষি সুনাক নাকি লিজ ট্রাস, কে বসবেন ব্রিটেনের গদিতে?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২, ১০:৪৫ এএম

ঋষি সুনাক নাকি লিজ ট্রাস, কে বসবেন ব্রিটেনের গদিতে?

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বহুল প্রতীক্ষীত ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বরিস জনসনের অপছন্দের ঋষি সুনাক নাকি তাঁর অনুগত পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজা ট্রাস জয়ের মুকুট পরবেন-তা জানা যাবে সোমবারই (৫ সেপ্টেম্বর)।

কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কখনও ঋষি সুনাক এগিয়ে যান তো আবার কখনও লিজ ট্রাস। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বিচারের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আসছে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধান্ত হবে ব্রিটেনের গদি কার। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক জয়লাভ করলে তিনি নিঃসন্দেহে ইতিহাস তৈরি করবেন। অন্যদিকে, লিজ ট্রাস জয়ী হলে ব্রিটেন পাবে মার্গারেট থ্যাচরের পর ফের নারী প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচনের সময় পরিচালিত সব সমীক্ষায় সমীক্ষায়, লিজ ট্রাস ঋষি সুনাকের থেকে এগিয়েই ছিলেন। বিবিসি, রয়টার্সসহ ব্রিটেনের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বর্তমান নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস  নিজের দলের মধ্যেও সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সরব থাকা ট্রাস বরিস জনসনের অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে, যখন দলের অনেক নেতা বরিস জনসনের বিরোধিতা করে পদত্যাগ করছিলেন, তখন লিজ ট্রাস তাঁর সমর্থনে দাঁড়িয়েছিলেন।

যখন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিল, তখন অবশ্য ঋষি সুনাক তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে ছিলেন, শেষ অবধি টিকে থেকে যান তিনি। কিন্তু নির্বাচনের প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে ভোট চাওয়ার পর ঋষি পিছিয়ে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছিল। সমীক্ষার পরিসংখ্যান ও একই কথা বলছে। এখন, প্রশ্ন উঠছে যে সেই সমস্যাগুলি কী ছিল যার জন্য ঋষি সুনাক লিজ ট্রাস থেকে পিছিয়ে রয়েছেন?

বরিস জনসনের বিরুদ্ধে যাওয়াটা প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে ঋষি সুনাক অনেক পিছিয়ে গেছেন বলে ব্রিটেনের রাজনীতিতে কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে। বরিস জনসন সরকারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত অর্থমন্ত্রী ছিলেন ঋষি সুনাক। সুনাক ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ভারতের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী নারায়ণ মূর্তির জামাতা তিনি। সুনাক (৪২) ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন যখন বরিস জনসন তাকে দেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

মত পার্থক্যের জন্য বিরিস জনসন সরকার থেকে ঋষি সুনাক আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন।  কিন্তু লিজ ট্রাস অনুগত ছিলেন। পদত্যাগ করে বরিসকে ছেড়ে যান নি।  বলা হচ্ছে, দলে যারা বরিস জনসনকে সমর্থন করেন, তারা বিপুল উৎসাহে লিজ ট্রাসকে ভোট দিয়েছেন। আর এ কারণে ঋষি সুনাক পিছিয়ে গেছেন বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

আবার লিজ ট্রাসের নির্বাচনী কৌশল তাকে ঋষি সুনাকের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে বলে মনে করেন অনেকে। লিজ ট্রাস তার নির্বাচনী প্রচারে হাতিয়ার করেছেন ট্যাক্স কমানোর বিষয়টি। নির্বাচনে জিতলে ১.২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর কমিয়ে দেবেন বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ট্যাক্স কাট এমন একটি প্রতিশ্রুতি যা প্রতিটি দেশের মানুষই পছন্দ করেন এবং সময়ে সময়ে প্রলুব্ধ করেন।

বরিস তার শাসনকালে বিতর্কের মুখে থাকলেও দলে খুবেই জনপ্রিয়তা আছে। তাছাড়া, লিজ ট্রাসকে ভোট দিতে বলেছেন সবাইকে। মূলত ঋষি সুনাক ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হোক তা তিনি চাইছেন না। লিজ ট্রাসকে জেতানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। ঋষি সুনাককে প্রধানমন্ত্রী হতে দেখতে পারবেন না বরিস, তা আগেই জানিয়েছিলেন। দলে বরিস জনসনের অনুসারীরা  বিশ্বাস করেন যে ঋষি বরিসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটবে আসছে সোমবারে। এখন সেই অপেক্ষায় ব্রিটিশদের পাশপাশি গোটা দুনিয়া।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুলাই মাসের শুরুতে নানা কেলেঙ্কারির কারণে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এরপর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১০ প্রার্থী। শেষ পর্যন্ত ব্রিটেনের গদিতে বসার দৌড়ে টিকে যান সুনাক ও ট্রাস। 

Link copied!